টিকা নিতে চরম গাফলতি – মিশিগানে করোনার সংক্রমণ কমেছে, বাড়ছে বাংলাদেশিদের মধ্যে


যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমলেও এর উল্টো চিত্র চোখে পড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে। করোনার প্রকোপে কাঁপছেন এখানকার বাংলাদেশিরা। ইদানিং কমিউনিটিনিতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ।

টিকা নিতে চরম গাফলতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে বেফাস চলাফেরা করার কারণে সংক্রমণের হার বেড়েছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।

কমিউনিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, নিউইর্য়কের পরেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বসবাস মিশিগানে। এ রাজ্যে গত সপ্তাহে মাওলানা আবদুল বাছিত ও ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমানসহ পাঁচজন বাংলাদেশি করোনায় মারা গেছেন। অন্য মৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পরিবার। এছাড়া হেমট্রামিক, ডেট্রয়েট, ওয়ারেন, স্টাইলিং হাইটস ও ট্রয় সিটির হাজারো বাংলাদেশি কোভিড-১৯ রোগে ভুগছেন। জটিলভাবে আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন ভেন্টিলেটর ও লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। মৃদৃভাবে সংক্রমিত রোগীরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, মিশিগানে এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০২০ সালের এপ্রিলের থেকেও কম। সংক্রমণও কমেছে। এছাড়া এক সপ্তাহ আগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ২০৩ জন। সংক্রমণে মারা গেছেন ৬১ জন। এর পরের সপ্তাহে কমে ২ হাজার ৪ জন আক্রান্ত হন। মারা গেছেন ৩২ জন।

মিশিগান রাজ্যে মহামারির পর থেকে এ পর্যন্ত আট লাখ ৭৪ হাজার ৬২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ হয়ে মারা গেছেন ১৮ হাজার ৬০৭ জন।

এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মিশিগানে ৫৫ ভাগ মানুষ এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। দুই ডোজ নিয়েছেন ৪৪ ভাগ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার অ্যামেরিকার সেন্টার ফর ডিসিস কন্টোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, ভ্যাকসিন কাজ করছে। টিকার দুই ডোজ নেয়া শেষ হলে মাস্ক পরার দরকার নেই। যারা এখনো টিকা নেননি, তারা যেন মাস্ক পরেন।

এদিকে মিশিগানের বাঙ্গালিপাড়ার চারদিকে মহামারি আর স্বজন হারানোর শোক বিরাজ করছে। এর পেছনে টিকা না নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম অবহেলার চিত্র ফুটে উঠেছে। নাইন মাইল একটি ম্যানোফেকচারিং কোম্পানিতে কাজ করেন ফরিদ মজুমদার ও সাইদুল ইসলাম। তারা জানান, সহকর্মী ১৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে টিকা নিয়েছেন মাত্র ৫ জন। অন্যরা এখনো টিকা নেননি। তাদের এক সহকর্মী ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ঘরে আছেন। সেলভী টাউন শীপের ২৩ মাইলের একটি কোম্পানিতে কাজ করেন এনামুল হক। তিনি জানালেন, একই শিপটে ২৪ জন বাংলাদেশি কাজ করেন। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৩ জন। এ সপ্তাহে নয়, পরের সপ্তাহের ছুটির দিনে ভ্যাকসিন নেবেন এই দ্বিদ্বাদ্বন্দ্বে ভ্যাকসিন নিতে অবহেলা করছেন তার অন্য সহকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টাইলিং হাইটসের একজন বাসিন্দা জানান, তার শশুরের ৬ সদস্যের পরিবারের ৫ জনই এখন করোনায় আক্রান্ত। ভ্যাকসিন নেওয়ায় শুধু তার শশুর আক্রান্ত হননি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রেজিস্টার নার্স শরমিন আক্তার সূচি বাংলা সংবাদ কে বলেন, কমিউনিটির এক শ্রেণির মানুষ করোনাকে পাত্তা দেননি। সরকারি বিধান মেনে মাস্ক লাগান ঠিকই কিন্তু নাক খোলা রাখেন। এছাড়া টিকা না নিয়েই স্বাভাবিক চলাফেরা শুরু করছেন। এই অবহেলা বা অসতর্কতাই এখন তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মহামারি থেকে উত্তরণে অবশ্যই দ্রুত টিকা নিতে হবে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত একাধিক চিকিৎসক বলেছেন, এমনিতেই জাতিগতভাবে আমাদের ইউমিন সিস্টেম দূর্বল। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শস্কা থাকে। টিকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। সুতরাং অবহেলা না করে দ্রুত টিকা নিতে চিকিৎসকরা পরার্মশ দিয়েছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *