ভারতের উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলায় গাড়ি চাপা দিয়ে কৃষক হত্যার অভিযোগে ঘটনার পাঁচ দিন পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস মিশ্র মনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা করার পর আশিসকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, আশিসের বক্তব্যে অসঙ্গতি পাওয়ায় ও তদন্তে অসহযোগিতা করায় উত্তর প্রদেশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।
গত রোববার লখিমপুর খেরিতে ভারতের নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের বিক্ষোভ চলাকালে মিছিলে ঢুকে পড়া মন্ত্রীর গাড়িবহরের একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় চার কৃষকের। মুহূর্তেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদকারীরা, চলে গণপিটুনিও। সেই সহিংসতার মধ্যে পড়ে নিহত হন আরও ৪ জন।
কৃষকরা বলছেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আশিস মিশ্র। তবে গাড়িচাপার ঘটনার সময় ছেলে আশিস ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেন অজয় মিশ্র। যে গাড়িটি বিক্ষোভকারীদের চাপা দিয়েছে সেটি তাদেরই মালিকানাধীন বলে স্বীকার করলেও ঘটনার সময় ছেলে আশিস গাড়িতে ছিলেন না বলে দাবি করেছিলেন অজয়।
কিন্তু অজয় অস্বীকার করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে গাড়িচাপার ঘটনায় তার ছেলেরই জড়িত থাকার আলামত মিলছে। গাড়িচাপায় কৃষক হত্যার ঘটনা নিয়ে এরপর সরগরম হয়ে ওঠে ভারতের রাজনীতি।
নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ঘটনার দিন রাতেই লখিমপুর খেরিতে রওনা দেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কিন্তু পুলিশ তাকে আটকে দেয়। ৩০ ঘণ্টা আটক রাখার পর প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটকানো হয় আরেক বিরোধীদলীয় নেতা অখিলেশ যাদবকেও। তা নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বুধবার নিহত কৃষকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা দেখা করেন। কংগ্রেসের এই প্রতিনিধিদলে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল ছাড়াও ছিলেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এবং দীপেন্দর সিং হুডা।
কংগ্রেস থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ, বিরোধী দলগুলোর সবাই আশিসকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন। চাপে পড়ে উত্তর প্রদেশের বিজেপি দলীয় যোগী আদিত্যনাথ সরকার তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করে। তারপরই সমন পাঠানো হয় আশিসকে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় লখিমপুর খেরির রিজার্ভ পুলিশ লাইনের কাছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল আশিসের। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তিনি সেখানে যাননি।
পরে শনিবার তিনি সেখানে হাজির হন। সকাল থেকে জেরা শুরুর পর তা রাত পর্যন্ত চলে। গত রোববার ঘটনার সময় তিনি কোথায় ছিলেন তা নিয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি আশিস। তার বক্তব্যে বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়ায় ও তদন্তে অসহযোগিতা করায় পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আশিসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তারের কথা থাকলেও বাবার কারণে তিনি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।