অবশেষে চালু হলো কুড়িগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’

Banglashangbad

অবশেষে চালু হলো কুড়িগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনের বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হবে।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রেনটির সাপ্তাহিক ছুটি বুধবার। এদিন ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে ট্রেনটি। আর ঢাকার কমলাপুর থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেনটি ছাড়বে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রামে পৌঁছাবে।

১৪টি বগি নিয়ে যাতায়াতের সময় ট্রেনটি রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর-জয়পুরহাট-সান্তাহার-নাটোর-মাধনগর-টাঙ্গাইল-মৌচাক-বিমানবন্দরে যাত্রী ওঠা-নামা করবে। অর্থাৎ কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা রুটে পথে ১০টি স্থানে ট্রেনটি দাঁড়াবে। এসময় যাত্রীরা ওঠা-নামা করতে পারবে। ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা-কুড়িগ্রামের ২৮৬ দশমিক ৮ মাইল বা ৫৪৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে।

কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাত্রায় মোট ৬৫৭টি আসন সুবিধা এবং ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম যাত্রায় ৬৩৮টি আসন সুবিধা থাকবে। কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে ১৬০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে। আসন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, এসি চেয়ার ৯৭২ টাকা, এসি সিট ১১৬৮ টাকা এবং এসি বার্থ ১৮০৪ টাকা ।

এর আগে বুধবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কুড়িগ্রাম প্রান্তে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রামে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, মো. পনির উদ্দিন আহম্মেদ এমপি, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুহিবুল ইসলাম খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী প্রমুখ।

কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন প্লাটফর্মে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন ও জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। এসময় জেলা প্রশাসক জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন।

এসময় উপকারভোগী নারী পার্বতী রাণী শীল দুই রুম বিশিষ্ট পাকা ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা হরিশ্বর তালুক গ্রামের হতদরিদ্র পার্বতী রাণী অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন তিনি। আর এখন পাকা ঘর, রান্না ঘর, ল্যাট্রিন যা তার স্বপ্নের ভাবনার মধ্যেও ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে রেলমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও একজন উপকারভোগীর কথা শুনেন। এসময় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের বিভিন্ন দাবির পরিপেক্ষিতে কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সঙ্গে ভাওয়াইয়া এ অঞ্চলের মানুষের আবেগের কথা বিবেচনা করে একটি ভাওয়াইয়া ইনিস্টিটিউট করা সম্ভব না হলেও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে ভাওয়াই চর্চা, গবেষণা ও প্রচার-প্রসারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)।

কুড়িগ্রামের প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি এ কে এম সামিউলক নান্টু বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের স্নেহে কুড়িগ্রামবাসীর দুঃখ বুঝে সমাধান করলেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। কুড়িগ্রামে যত উন্নয়ন দৃশ্যমান তা সবই শেখ হাসিনার হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে। তাই শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন, অবশেষে আমরা আন্তঃনগর ট্রেন পেলাম যা স্বপ্নের মতো লাগছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্বপ্নের এ বাস্তবায়নে এতো আনন্দিত যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী (সাবেক এমপি) বলেন, বিএনপি সরকার আমলে কুড়িগ্রামের একটি রেলস্টেশন ও রেললাইন তুলে নিয়ে যায়। আর শেখ হাসিনার সরকার নতুন নতুন ট্রেন দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামকে ভালোবাসে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *