অমুসলিমরা ভারতে ৫ বছর থাকলেই নাগরিকত্ব


আগামী সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উপস্থাপন করা হবে। ওই বিল অনুযায়ী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অমুসলিমরা মাত্র পাঁচ বছর শরণার্থী হিসেবে থাকলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। তবে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা দেশটিতে পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে থেকেছেন তারাই নাগরিকত্ব পাবেন।

১৯৫৫ সালের মূল আইনে বলা হয়েছিল, নাগরিকত্ব পেতে হলে এ দেশে থাকতে হবে ১১ বছর। কিন্তু প্রথম মোদি সরকারের আমলে আনা বিলটিতে তা কমিয়ে ছয় বছর করা হয়। এবার কমানো হলো আরও এক বছর।

এনআরসিতে যেখানে প্রমাণ দাখিল করতে গিয়ে ঘাম ছুটেছে সাধারণ মানুষের, সেখানে নতুন বিলে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে। নাগরিকত্ব প্রমাণে কাগজপত্রের ঝামেলা যাতে না থাকে সে জন্য শুরু থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দাবি জানায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।

সংশোধিত আইনে কোনো শরণার্থী অমুসলিম হলফনামা দিলেই তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। কিন্তু কোনো মুসলিম যদি নিজেকে হিন্দু বা পার্সি বা বৌদ্ধ হিসেবে দাবি করেন তা হলে তা আটকানোর উপায় রয়েছে কি না, তা নিয়ে নীরব বিজেপি শিবির। তবে বিজেপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিলটি আগে আসুক। তা হলেই সব স্পষ্ট হবে। যে প্রশ্নগুলো উঠছে বিলটির বিস্তারিত আলোচনায় নিশ্চয়ই উঠে আসবে।

রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন নাগরিকত্ব বিল পাস হলে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি সুবিধা হবে মতুয়া সম্প্রদায়ের। কারণ তারা দীর্ঘ সময় ধরে নাগরিকত্বের দাবিতে সরব রয়েছে। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, সেই দাবি পূরণ করতেই বিলটি আনছে মোদি সরকার।

মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন এমন প্রায় ৭০ লাখ মতুয়ার নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত কাগজপত্র নেই। এরা মূলত রয়েছেন নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশপরগনা, মালদহ, কোচবিহারসহ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে। বিলটি পাস হলে তারা সুফল পাবেন। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে বিল পাস হওয়া পর্যন্ত যে অমুসলিমরা শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করেছেন তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? বিলে এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় সংশয় ছড়িয়েছে।

শান্তনু বাবুর দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার দিন পর্যন্ত আসা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব বিলের সুফল পাবেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ বছর এ দেশে থাকার যে মেয়াদের কথা বলা হয়েছে শুধু সেই শর্তই যে অস্বীকার করা হবে তা নয়, ভিত্তিবর্ষ হিসেবে যে দিনটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে তারও কোনো গুরুত্ব থাকে না।

নতুন বিলে বলা হয়েছে ইনার লাইন পারমিট ও ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকায় ওই আইন প্রযোজ্য হবে না। একই দেশে নাগরিকত্বের প্রশ্নে কেন দুই ধরনের নিয়ম আনা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তার যুক্তি, আগের অধিবেশনে এক দেশ এক সংবিধানের যুক্তি দেখিয়ে কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হল। আর পরের অধিবেশনে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নে দ্বৈত নীতি নিচ্ছে সরকার। পুরোটাই হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দার স্বার্থে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *