আগের বছরের চেয়ে কম রাজস্ব আহরণ!


বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে স্থবির গোটাবিশ্ব। দেশেও প্রায় দুই মাস ধরে চলছে সাধারণ ছুটি। এই ছুটিকে কার্যত লকডাউন-ই বলা চলে। তাই থমকে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এমনকি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায় গত অর্থবছরের চেয়ে কমবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ অনুমান সত্যি হলে দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম আগের অর্থবছরের তুলনায় কম রাজস্ব আহরণ হবে।

 রাজস্ব আহরণ বাড়াতে করের আওতা বাড়াতে হবে। তা না করে প্রতি বছর যারা কর দেন, তাদের ওপর আরও চাপ দেয়া হয়। এজন্য রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার প্রয়োজন 

করোনার প্রভাবে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া এবং আগামী অর্থবছর যৌক্তিক হারে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়াম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি এসব কথা উল্লেখ করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

করোনায় রাজস্ব আহরণের প্রভাব এবং এনবিআরের অবস্থান নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথমটি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বমোট রাজস্ব আহরিত হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। তবে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে আহরণের যে গতি তাতে অর্থবছর শেষে সর্বমোট ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা অহরিত হতে পারে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম রাজস্ব আহরণ হবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, “চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা। দুর্যোগ দীর্ঘায়িত হওয়ায় যা আহরণ একপ্রকার অসম্ভব বিবেচনা করা যায়। আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে দুর্যোগপরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হতে শুরু করে তাহলেও স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর রেখে যাওয়া বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় আশানুরূপ রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে না।

তাই চলতি বছরের সম্ভাব্য আদায়ের ওপর পূর্ববর্তী গড় প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ হিসাব করা হলে আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরে সর্বমোট আহরণ ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না মর্মে পরিসংখ্যানভিত্তিক ধারণা করা যায়। তারপরও আগামী অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আদায় করা দুরূহ হবে। তাই যৌক্তিক হারে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের গতিপ্রকৃতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালো ছিল না। করোনা আসার পর তা বেশি খারাপ হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর কোনো ধরনের সংস্কার ছাড়াই এনবিআরের জন্য বড় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। এক লাফে অর্থাৎ এক বছরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়।’

‘রাজস্ব আহরণ বাড়াতে করের আওতা বাড়াতে হবে। তা না করে প্রতি বছর যারা কর দেন, তাদের ওপর আরও চাপ দেয়া হয়। এজন্য রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার প্রয়োজন’— বলেন এই অর্থনীতিবিদ।

এদিকে এনবিআরের সর্বশেষ সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ২১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ গত পাঁচ বছরে দেশে রাজস্ব আহরণের গড় প্রবদ্ধি ১৩ শতাংশের ওপরে।

এছাড়া চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ছে। বাজেট ঘাটতি এবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশের মতো হবে বলে অনুমান করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অনুমান সত্যি হলে টাকার অংকে তা দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, দেশের ইতিহাসে এটাই হবে সর্বোচ্চ বাজেট ঘাটতির উদাহরণ।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সময়ে সরকারকে ধার করে হলেও বেশি বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সঙ্গত কারণে ঘাটতিও বড় হবে।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের জন্য প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, ৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরে নিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়নের কথা ভাবা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার কথা চিন্তা করা হয়। করোনার নেতিবাচক প্রভাব সব খাতে পড়ায় শেষ পর্যন্ত বাজেটের আকার কম ধরা হচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *