আগে ছিল ১৬০০ টাকা এখন ইলিশ মাত্র ৭০০


মা-ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩০ অক্টোবর রাত থেকেই আবারও শুরু হয়েছে ইলিশ ধরা। জেলের জালেও ভরপুর ধরা পড়ছে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশ। এতে বাজারেও ভরপুর পাওয়া যাচ্ছে বড় ইলিশ। ফলে দামও তুলনামূলক কিছুটা কম। এক কেজি ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকার মধ্যেই মিলছে বেশিরভাগ বাজারে।

অনেকের অভিমত, ইলিশের এ দাম ক্রেতাদের ‘সাধ্যের’ মধ্যে রয়েছে। ফলে প্রিয় মাছ ইলিশ কিনতে বাজরে ছুটছেন ক্রেতারাও। যারা কম দামে ইলিশ কিনবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন, তাদের একটি অংশ এখন বাজার থেকে বড় ইলিশ কিনে সংরক্ষণে রাখছেন।

তবে দাম কমার পরও ইলিশের দাম এখনও বেশি বলে কেউ কেউ অভিমত দিচ্ছেন। তাদের মতে, বাজারে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশ মাছ ভরপুর পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ যে পরিমাণে রয়েছে, দাম সে হারে কমেনি। ইলিশের দাম আরও কমা উচিত।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, ইলিশের দাম এখন সব থেকে কম। এর থেকে ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং কিছুদিন পরে ইলিশের দাম বেড়ে যাবে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে যে ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা পিস বিক্রি হয়েছে, তা এখন ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বড় ইলিশের পাশাপাশি দম কমেছে ছোট ইলিশেরও।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া ও খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মা-ইলিশ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, কেনা-বেচা, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখে সরকার। ২২ দিনের সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই রাজধানীর বাজারে ইলিশ কেনা-বেচা শুরু হয়। বাজারভেদে ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা কেজি, যা ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ার আগে ছিল ১১০০-১২০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে, যা আগে ছিল ৮০০-১০০০ টাকা।

বড় ইলিশের পাশাপাশি দাম কমেছে ছোট ও মাঝারি ইলিশের। ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকার মধ্যে, যা আগে ছিল ৫০০ টাকার ওপরে।

এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সাধন বলেন, ‘আগে যে ইলিশ ১৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেই ইলিশ ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এই দামেও যদি কেউ ইলিশ না কেনে তাহলে তার ভাগ্যে ইলিশ নেই। এর থেকে কম দামে আর ইলিশ পাওয়া সম্ভব না। কিছুদিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন ৮০০ টাকার ইলিশ ১৫০০ টাকা হয়ে যাবে।’

রামপুরার বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, ‘বড় ইলিশ কিনব বলে অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছি। অক্টোবরে ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ার আগে দাম বেশি ছিল। তাই সে সময় ইলিশ কিনিনি। এখন দাম কম, এ জন্য একবারে দুই হালি কিনে রাখছি। আমার বাসার সবাই ইলিশ পছন্দ করে।’

কারওয়ান বাজার থেকে ইলিশ কেনা কামাল হোসেন বলেন, ‘ইলিশের এখন যে দাম আমার মতে তা সবারই সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। ১ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ টাকায় কিনেছি। আমার ধারণা, এর থেকে কম দামে ইলিশ কেনা সম্ভব না। এই দামে ইলিশ কিনতে পেরে আমি খুশি।’

খিলগাঁও বাজারে ইলিশ কিনতে যাওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি চাচ্ছে ৯০০ টাকা করে। আমার মতে দাম আরও একটু কম হওয়া উচিত। এখন ফার্মের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। তাহলে চিন্তা করে দেখেন, এক কেজি ইলিশের দামে প্রায় ৮ কেজি মুরগি কেনা সম্ভব। তাহলে ইলিশের দাম কোন বিবেচনায় কম বলা যায়। আবার বাজারে কম ইলিশ আসছে তা-ও তো না।’

তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছ সবাই পছন্দ করে। এ কারণে ইলিশের প্রতি চাহিদাও বেশি। যাদের টাকা আছে তাদের জন্য ৯০০ টাকা কেজি হয় তো কিছু না। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কি ৯০০ টাকা কেজি দরে মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব? তাহলে বুঝতে হবে ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ হলেও তা খাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব না।’

এদিকে বাজারে ইলিশের সরবরাহ ও চাহিদা বাড়ায় অন্য মাছের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের মতো তেলাপিয়া মাছ ১২০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩৫০ টাকা কেজি। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি। ট্যাংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *