বাংলা সংবাদের নিয়মিত আয়োজন ‘বাড়ির আঙ্গিনায় বাগান’ বিভাগে আপনাকে স্বাগতম। মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শখ থাকে, এর মধ্যে বাগান একটি। নিজের বাড়ির এক টুকরো খালি জায়গায় নিজের পছন্দের ফুল, ফল কিংবা নানা বাহারি গাছে মানুষ সাজিয়ে তোলে তার স্বপ্নের বাগান। বাড়ির সামনে বা পেছনের এক খণ্ড ফাঁকা জমিতে বাগান করার শখ থাকে বেশিরভাগ মানুষেরই। তেমনি ফারজানা চৌধুরী পাপড়ির বাগান করার শখ সেই ছোটবেলা থেকেই। পেশায় সাংবাদিক, কাজ করছেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার মিশিগান প্রতিনিধি হিসেবে । সম্প্রতি তিনি বাংলা সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক ইকবাল ফেরদৌসকে তার বাগান করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানিয়েছেন।
বাংলা সংবাদ: আমেরিকায় কবে এসেছেন? কোথায় থাকেন?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: আমি বিয়ের পর ২০০১ সালে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা চলে আসি। বর্তমানে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ওয়ারেন সিটিতে বসবাস করছি।
বাংলা সংবাদ: বাগান কবে থেকে শুরু করেছেন?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা শহরে। বাড়ির সামনে ও পেছনে জায়গা বাগান করার শখ থাকলেও তা পূরণ করতে পারেনি। আমেরিকার হ্যামট্রামিক সিটিতে আসার পর আমি বাগান করা শুরু করি। প্রথমে বাড়ির সামনে ফুলের বাগান করতাম। সেখানে থাকত গোলাপ,গাঁদা, সূর্যমুখী এবং বাড়ির পেছনের বাগানে লাউ, শিম, শশা,পুঁইশাক ইত্যাদি। দীর্ঘ বছর বাগান করতে করতে আজ আমি বাগানপ্রেমী। এখন আমার ওয়ারেনের বাড়ির বাগানে বড়ই,লেবু, মেহেদি পাতা,রুজট পাতা ছাড়াও হরেক রকমের সীম,করোলা,লাউ ইত্যাদি গাছ আছে।
বাংলা সংবাদ: বাগানের খরচ কেমন?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: বাগান করতে খুব বেশি একটা খরচ হয় না। আগ্রহ থাকলে খুব সহজেই বাগান করা যায়। বর্তমানে বাগান করার জন্য ফেসবুকভিত্তিক অনেক গ্রুপ আছে। সেখান থেকেও অনেকে ধারণা নিয়ে খুব সহজেই বাড়ির আঙ্গিনায় ফুল বা ফলের বাগান করতে পারে।
বাংলা সংবাদ: বাগানের চারা কোথা থেকে নিয়ে আসেন?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: আমি বাগানের চারা বন্ধুদের কাছ নিয়ে আসি। তাছাড়া বর্তমানে ফেইসবুক ভিত্তিক বাগান সম্পর্কে অনেক পেজ থেকে খোঁজখবর নিয়ে সংগ্রহ করি।
বাংলা সংবাদ: বাগান পরিচর্যায় কতটুকু সময় যায়?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: বাগান পরিচর্যায় দিনে গড়ে ঘন্টা দুয়েক সময় দিলেই চলে। আমার ভালো লাগার জায়গা থেকে আমি নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা করে থাকি।
বাংলা সংবাদ: আপনি কেন বাগান করেন?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: বিভিন্ন নিয়মকানুন আর কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই। সকালবেলা ঘুমভাঙা অলস চোখে আলসেমি কাটিয়ে বাড়ির দরজা খুলে যখন বাইরে পা রাখি, চোখে পড়ে আমার ফুল,ফল ও সবজি বাগানের দৃশ্য। বাগানের দিকে কিছুটা সময় নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। বৃক্ষের কাছে থেকে বন্ধুত্বের টানের মর্মার্থ খুঁজি। ভালোবাসার পরিধি পরিমাপ করি। জীবনের প্রতি জীবনের ভালোবাসার কৌশল শিখি। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, আমি গাছগুলোর সঙ্গে একাকী কথা বলি, এটা কি একধরনের অসুখ? নাকি গাছের প্রতি একধরনের প্রগাঢ় ভালোবাসা? নাকের ডগায় লেগে যায় ফুলের সুবাস। পলকহীন চোখে গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় সবুজের নির্যাস চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। গাছেরাও ডালপালা মেলে দিয়ে তাদের নিয়মে হাসছে। দুর থেকে বাগানে গাছের ডালে বসা ঘুঘু পাখির গান শুনি। বাগান বিলাসিদের ঠিকানা “অমরাবতি” নামক ফেসবুকে একটি পেইজের আমি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৃক্ষ বা বাগান প্রেমিকরা সবুজের সমারোহ গড়ে তুলতে একত্রিত হয়েছেন “অমরাবতি” নামক ফেসবুক পেইজে। অমরাবতি পেইজে প্রবেশ করলে মনে হয় এ যেনো একখন্ড বাংলাদেশ। মিশিগানে অনেক পরিবারের বাড়ির সামনে এবং পিছনে ফুল ও সবজি বাগানের চাষ করেন। সারা দিন ঘরের কাজের পর বিকেলে যখন বাগানে কাজ করি, তখন সারা দিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আমার মতো অনেকেই করোনা মহামারীতে গৃহবন্দী হবার পর থেকে বাগানের প্রতি আরও বেশি উদ্যোগী হয়েছেন।
বাংলা সংবাদ: বাগান করার উপকারিতা কি?
ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি: আমি মনে করি প্রতিটা মানুষের হৃদয় হোক গাছের মতো শান্ত কোমল। বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে অগণিত মানুষের জন্য বাগান বাঁচিয়ে রাখা একান্ত প্রয়োজন। যখন কোনো ব্যক্তি তার বাগানের বিভিন্ন প্রকার ফুল, সবজি এবং ফলমূল দেখে, তখন তার মন আনন্দে নেচে ওঠে। এটি আমাদের দেহ ও মনকে সতেজ করে। বস্তুতপক্ষে বাগানই হচ্ছে মানবিক আনন্দের সবচেয়ে পবিত্র উৎস।
বাংলা সংবাদের নিয়মিত আয়োজন ‘বাড়ির আঙ্গিনায় বাগান’ বিভাগে আপনার লেখা প্রকাশ করতে যোগাযোগ করুন: ইকবাল ফেরদৌস, সম্পাদক ও প্রকাশক, বাংলা সংবাদ। মোবাইল:+1 586-481-6134 , ইমেইল: banglashangbad@gmail.com ।