আজ ১০ জিলহজ্ব মোতাবেক ২১ জুলাই বুধবার। সিলেটসহ সারাদেশে পালিত হবে ঈদ-উল-আযহা। নবী হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর ত্যাগে ভাস্বর হওয়ার দিন আজ।
ত্যাগে উজ্জীবিত হওয়ার অনন্য এক দিন ঈদুল আযহা। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। গত বছরের ন্যায় এবারও মহামারী করোনাকালে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ত্যাগ-আনন্দের এই দিনটি।
ঈদের দিনটিতে সামর্থ্যবানরা পশু কুরবানি করে থাকেন। রাসূল সা. বলেছেন কুরবানি মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ. এর সুন্নত।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম আ. আল্লাহর সুন্তুষ্টির জন্য তার ছেলে হজরত ইসমাঈল আ. কে যে কুরবানির করতে যান, সেই স্মৃতির সম্মানে তখন থেকে এই কুরবানির প্রচলন।
ঈদুল আযহা একটি উৎসব দিন হলেও এবার সেই রেশ নেই। আজ এমন এক সময়ে ঈদ পালিত হবে যখন করোনা নামক এক মহামারী প্রায় অচল করে দিয়েছে বিশ্ব। তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এবার উৎসবের আমেজ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
স্বল্প আয়ের দেশ হিসেবে সেই রেশ বেশ শক্তভাবে বাংলাদেশের উপর এসে পড়েছে। কমে গিয়েছে লোকজনের আয়, চাকরি ব্যবসা নেই অনেকের। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড়ো একটা অংশ এখন বেকার। এই অবস্থায় এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা।কুরবানির সময়ের এই চিত্র বিগতদিনে আর কখনো এইভাবে দেখা যায়নি। অনেকই এবার কুরবানি দিতে পারছেন না।
যারা কুরবানি দিয়ে থাকেন তাদের কুরবানির টাকার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আসে প্রবাস থেকে। এবার প্রবাস থেকে অন্যান্য বারের মতো টাকা আসেনি। ফলে প্রবাসের টাকা না আসা কিংবা কম আসা আর আয় কমে যাওয়ায় যারা একান্ত কুরবানি দিচ্ছেন তাদেরও এবার সীমিত পরিসরে কুরবানি দিতে হচ্ছে।
প্রতিবছর ঈদের আগে রাস্তায় জোরে হাঁক দিয়ে গরু নিয়ে যেতে দেখা যেতো লোকজনদের। এবার আগের মতো চোখে পড়েনি কুরবানির ঈদের সেই চিরচেনা চিত্র। বাজারে গরু উঠেছে কিন্তু ক্রেতা নেই। বেপারীরা চাতকের মতো অপেক্ষায় শেষ মুহূর্তে হলেও যদি কাক্সিক্ষত মানের ত্রেতা পান সেই আশায়। এরউপর একমাসের মধ্যে টানা তিনবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন খামারিরা।
তাছাড়া যারা সারাবছর ব্যক্তি উদ্যোগে পশুপালন করেন কুরবানিতে একটু ভালো লাভের আশায়, তারাও বন্যার জন্য আগেবাগে তাদের পশু নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। শহরে যারা থাকেন তাদের অনেকের কয়েকমাসের বাসাভাড়া বাকি, নিত্যপণ্যের দোকানে বাকি। এই অবস্থায় বাকি রেখে কুরবানির কথা তারা চিন্তাও করতে পারছেন না। চাকরি কিংবা কাজ না থাকায় অনেককেই শহর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে।
ফলে শহরে কমেছে কুরবানির সংখ্যা, কমছে কুরবানির পশু কেনার হারও। করোনার এই সময়ে সবচেয়ে নাকাল অবস্থায় মধ্যবিত্তরা। এইশ্রেণি সাধারণত চাকুরি, ছোটোখাটো ব্যবসা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। করোনায় তাদের সেই আয় প্রায় শূণ্যের কোঠায়। অনেকের কর্মক্ষেত্রের বকেয়া পাওনাও বাকি, মালিক পক্ষের হদিস নেই। ফলে অন্যান্য সময় তারা হয়তো ছাগল কিংবা ভাগে গরু কুরবানি দিতেন।
কিন্তু বর্তমানে জীবনমান নিয়ে তাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই কুরবানি তাদের জন্য আকাসকুসুম স্বপ্ন। সবকিছু ছাপিয়ে বর্তমানে এমন এক সময় যাচ্ছে যেখানে বেঁচে থাকাটাই যেন সবচেয়ে বড়ো বাস্তবতা। এই বাস্তবতা ছাপিয়ে ঈদ কিংবা কুরবানি সবাইকে অন্যান্য বারের মতো স্পর্শ করবে সেই চিন্তার সুযোগ নেই। তারপরও মানুষ আশায় বাঁচে। করোনার এই করাল গ্রাস একদিন থেমে যাবে।
আবার অশ্রুসজল চোখে দেখা দেবে আনন্দের ঝিলিক। কেটে যাবে বেদনার কালো মেঘ। কবির ভাষায় মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।
যেমন সূরা আলাম নাশরাহ এর ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই কষ্টের পর রয়েছে সুখ। সেই প্রত্যাশায় এবারে ঈদ যেমন হোক আগামীর দিনগুলো যেন হয় সেই আগের মতো সুন্দর আর উৎসবমুখর। ঈদ মোবারক।