আজ ভোট, ঢাকার মেয়র হচ্ছেন কারা?


ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগরপিতা কারা হচ্ছেন? নৌকা নাকি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী? দুই সিটিতে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্য থেকেই দু’জন মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এমনটি মনে করছেন সাধারণ ভোটারসহ সংশ্লিষ্টরা।

আজ শনিবার ভোটারদের রায়ে চূড়ান্ত হবে আগামী পাঁচ বছর নগরবাসীর দেখভালের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন। পাশাপাশি নির্বাচিত হচ্ছেন দুই সিটির ১৭২ জন কাউন্সিলর।

এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলবে টানা ভোটগ্রহণ। এ উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই দুই সিটি নির্বাচনে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই ফলাফলে নির্ধারিত হবে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র কে- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম নাকি বিএনপির তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণ সিটির ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নাকি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

এ নির্বাচনে প্রমাণিত হবে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি বেশি জনপ্রিয়। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতেই এ নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

আর নির্বাচন সুষ্ঠু করার মধ্য দিয়ে ইসি ও ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও নির্ভর করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

এদিকে এ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের অর্ধলক্ষাধিক সদস্য।

নির্বাচনী অপরাধ বিচারে রয়েছেন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে প্রবেশের পর তাদের দেখভালের দায়িত্ব ইসির।

দুই সিটির কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, টানা ২১ দিন অনেকটাই নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এ পর্যন্ত দুই সিটিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছে। তবে সার্বিক পরিবেশ ভালো ছিল। তবুও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। দুই সিটিতে বড় দুই দলের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

এছাড়া মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণ ঘিরে টানটান উত্তেজনা থাকতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্স রাখা হয়েছে। ভোটের পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে যেসব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রয়েছে সেগুলো সচল রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুই সিটির ভোট পর্যবেক্ষণ করতে নির্বাচন কমিশনের ১৮ জন কর্মকর্তাকে গোপন পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সার্বিক পরিস্থিতি ইসি সচিবালয়কে অবহিত করছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, প্রথমবার দুই সিটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এ মেশিনের কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ জন করে মোট ৫ হাজার ১৫ জন সদস্য নিরস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করবেন। সব দলের প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চালাতে পারায় সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর তুলনায় ঢাকার দুই সিটিতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সব মিলিয়ে ৭৫০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে ৬ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি ৭৩৭ জন কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।

মেয়র পদে মূলত আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

এ সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। বাকি মেয়র প্রার্থীরা হলেন- গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহারানে সুলতান বাহার।

অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপির তাবিথ আউয়াল। এছাড়া এ সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন- কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল- পিডিপির শাহীন খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ।

শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, ভোট উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স টহল দিচ্ছে। এসব বাহিনীর গাড়িতে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের নম্বরও সাঁটানো রয়েছে।

মাঠে ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির কয়েকটি পয়েন্ট থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে। সব কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে মালামাল পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। সিইসি কেএম নূরুল হুদা নিজেও নির্বাচনী মালামাল বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে নির্বাচন ভবনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনাররা। ওই বৈঠকে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

বৈঠক থেকেই নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে কিছু নির্দেশনাও দেন কমিশনাররা। পরে সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।

নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ পর্যালোচনা করেছি। আমরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। টেলিফোনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছে কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ধরনের আশঙ্কার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ভোটাররা অবাধ ও নির্বিঘ্নে নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য চলে আসবেন। তাদের কোনো অসুবিধা নেই। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ভোটাররা যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে তাতে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সিইসি বলেন, সব দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। নির্বাচন প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে নির্বাচনের পরিবেশ উন্নততর হয়। সিটি নির্বাচনে সেই পরিবেশ বিরাজমান।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে ঢাকা উত্তরে ৩৬টি ও দক্ষিণ সিটিতে ৫৭টি ওয়ার্ড ছিল। এবারের দুই সিটিতে ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে বেড়েছে ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যাও। এ নির্বাচনে দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে আজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার। এ নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সব মিলিয়ে ৭৫০ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত ৩১ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ২ জানুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ৯ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণের তারিখ গত ৩০ জানুয়ারি থাকলেও ওইদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা থাকায় ওই তারিখ পরিবর্তন করে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। গত ১০ জানুয়ারি প্রচার শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হল।

নিরাপত্তা চাদরে সিটি নির্বাচন : ভোট উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এ নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিম হিসেবে পুলিশ ও এপিবিএনের সমন্বয়ে ২২৪ প্লাটুন, র‌্যাবের ১৩০ প্লাটুন ও বিজিবির ৬৫ প্লাটুন সদস্য মাঠে রয়েছেন। সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৫৪টি টিম এবং পুলিশ ও এপিবিএনের সমন্বয়ে ৫৪টি মোবাইল ফোর্স, ১৮টি স্ট্রাইকিং ও ২৭টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৮ প্লাটুন বিজিবি, ৭৬টি র‌্যাবের টিম, পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৭৫টি মোবাইল ও ২৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এ সিটিতে পুলিশের ২৫টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এজেন্টদের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ ইসির : বিগত অনেক নির্বাচনে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার বিস্তর অভিযোগ করে আসছে দলটি। এবার নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট যেন বের করে দেয়া না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার এ বিষয়ে সিইসি বলেন, এজেন্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- তারা যেন দায়িত্ব নিয়ে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করেন। কেউ একজন বলল আর তিনি বেরিয়ে যাবেন সেটা যেন না করেন। এ ধরনের ঘটনা যদিও না ঘটার সম্ভাবনা বেশি। তারপর যদি ঘটে সঙ্গে সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সাহায্য নেবেন, বাইরে অবস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জানাবেন। নিজে থেকে যদি বেরিয়ে না যান তাহলে এজেন্টদের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমি আগেই বলেছি, এজেন্টদের শেল্টার দিতে হবে। তারা নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশ করার পর তাদের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের। সিইসি বলেন, অনেক সময় না জানিয়ে এজেন্টরা বেরিয়ে যান আর বলা হয় আমাদের এজেন্ট নেই।

ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা নয় : সিইসি কেএম নূরুল হুদা ভোট দেয়ার পর কেন্দ্রের বাইরে জটলা না পাকাতে ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেন তিনি। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ভোট দেয়ার পার ৭-৮ জন এক জায়গায় থাকলে তাদের বের করে দেয়া হবে। নিঃষ্প্রয়োজনে কেউ যেন ভোটকেন্দ্রের আশপাশে না থাকেন সেই অনুরোধ করব। বিশ্বাস করি ইভিএমের মাধ্যমে ভোটার তাদের নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। এটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা চাই।

দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশীয় পর্যবেক্ষক : ঢাকার দুই সিটির ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন বিভিন্ন দেশের ৭৪ বিদেশি পর্যবেক্ষক। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা ঢাকা সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এরমধ্যে আমেরিকার ২৭, ব্রিটিশ ১২, সুইজারল্যান্ডের ৬, জাপানের ৫, নেদারল্যান্ডসের ৬, ডেনমার্ক ৩, নরওয়ে ৪, অস্ট্রেলিয়া ২, কানাডা ৪ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫ জনকে পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানিয়েছেন, দূতাবাসের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এ দেশের নাগরিক তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নয়, দেশীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে পর্যবেক্ষণ করবেন। অপরদিকে দেশীয় এক হাজারের বেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

প্রার্থী সংখ্যা : ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩৩৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন আবার যাচাইয়ে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। বর্তমানে মেয়র পদে ৬ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর ভোটের মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৪১৬ জন।

এ সিটিতে ৭ জন মেয়র পদে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তবে কমেছে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর সংখ্যা। এ সিটিতে ৭৫টি ওয়ার্ডে ৪৬০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩২৭ জন ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে ১০২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভোটের মাঠে রয়েছেন ৮২ জন।

প্রথমবার ইভিএম : জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে প্রথমবার ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে যাচ্ছে ইসি। দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের জন্য ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএম রয়েছে। ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ১৭৮টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৮টি মেশিন ব্যবহার হবে। আরও জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ১৫ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন করে সার্জেন্ট বা কর্পোরাল বা ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৫২ জন জেসিও ও ২৭ জন অফিসারও মাঠে থাকবেন।

ভোটার সংখ্যা : ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্র্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন।

সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ ও নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ ও নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।

ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ : জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র ও ১৪ হাজার ৪৪৫টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ এবং দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং দক্ষিণে ৬৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব কেন্দ্র অবস্থিত।

একক হিসাবে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি ১১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন মিরপুরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। একই সিটির তেজগাঁওয়ের সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে রয়েছে ১০টি ভোটকেন্দ্র। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কদমতলীর একে হাই স্কুল কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৬৮ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১৪ হাজার ৪৩৪ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২৮ হাজার ৮৬৮ পোলিং কর্মকর্তা রয়েছেন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮ জন প্রিসাইডিং ও ৭ হাজার ৮৫৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং ও ১৫ হাজার ৬৯২ পোলিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করবেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১ হাজার ১৫০ প্রিসাইডিং, ৬ হাজার ৫৮৮ সহকারী প্রিসাইডিং ও ১৩ হাজার ১৭৬ পোলিং কর্মকর্তা ভোট নেবেন।