আফগানিস্তানে আর্থিক ব্যবস্থা ‘অস্তিত্বের সঙ্কটে’ পড়েছে


আফগানিস্তানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘খাদের কিনারে’ পৌঁছে গেছে জানিয়ে সতর্ক করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা।

ইসলামিক ব্যাংক অব আফগানিস্তান এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মুসা কালীম আল-ফালাহি বলেছেন, “এই মুহূর্তে ব্যাপক হারে নগদ অর্থ তুলে নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকে শুধুমাত্র অর্থ উত্তোলনের কাজই হচ্ছে, বেশিরভাগ ব্যাংক এখন চলছে না, পুরো মাত্রায় সেবা দিতে পারছে না।”

সাময়িকভাবে দুবাইয়ে অবস্থান করা এই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, কাবুলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে গ্রাহকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় দেশটির আর্থিক ব্যবস্থা ‘অস্তিত্বের সঙ্কটে’ পড়েছে।

গত অগাস্টে তালেবান কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখন টালমাটাল এক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি অনুদানের উপর নির্ভরশীল এই দেশের মোট দেশজ আয়ের ৪০ শতাংশই আসে আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে।

কিন্তু তালেবান ক্ষমতা দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক তহবিল এবং সম্পদ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে সেই অর্থে হাত দিতে পারছে না তালেবান।

তবে অর্থের যোগান বাড়াতে তালেবান অন্য উৎসের সন্ধান করছে জানিয়ে আল-ফালাহি বলেন, “তারা চীন এবং রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এবং একই সঙ্গে অন্য দেশগুলোতেও চেষ্টা চালাচ্ছে।”

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনা শুরু করেছে চীন। তালেবানের সঙ্গে কাজও করেছে দেশটি।

সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রয়াত্ত সংবাদ মাধ্যম ‘গ্লোবার টাইমস’ এর এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে সহায়তা দেওয়ার ‘প্রচুর সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র’ রয়েছে এবং এক্ষেত্রে চীন ‘এগিয়ে রয়েছে’।

তবে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট সামাল দিতে তালেবান সরকারকে বড় ধরনের চাপের মধ্যে দিয়েই যেতে হচ্ছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং স্থানীয় মুদ্রা আফগানি ক্রমাগত দর হারাচ্ছে। উপার্জনের পথ হারিয়ে অর্থ সঙ্কটে মরিয়া হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ।

জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, আফগানিস্তানের মাত্র ৫ শতাংশ পরিবার এখন প্রতিদিনের খাবারের সংস্থান করতে পারছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মত পশ্চিমা দেশগুলো জানিয়েছে, নারী এবং সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অবস্থান পাল্টানোসহ আরও কিছু শর্ত পূরণ করলেই তারা তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে।

আল-ফালাহি বিবিসিকে বলেছেন, তালেবানের দেওয়া বিবৃতিতে নারীরা বাইরে কাজ করার অনুমোদন পাবে না বলে জানানো হলেও তার ব্যাংকের নারী কর্মীরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন।

“… নারীদের মধ্যে এক ধরনের ভয় ছিল, তারা অফিসে আসছিল না, কিন্তু ধীরে ধীরে এখন তারা অফিসে আসতে শুরু করেছেন।”

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যে বক্তব্য দিয়েছেন, ফালাহির বক্তব্যেও একই সুর পাওয়া যাচ্ছে।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেছিলেন, তালেবান এখন নিজেদের একটি আধুনিক এবং পরিবর্তিত ভাবমূর্তি দেখাতে  চাইছে।

“এই মুহূর্তে তারা অনেক বেশি নমনীয়…। এই সময়টায় তারা কোনো কঠোর আইন কিংবা বিধি আরোপ করবে না।”

অবশ্য নারী সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, তালেবান যেসব কথা বলেছে, তার সঙ্গে বাস্তবের ব্যবধান অনেক। নারী এবং মেয়েদের কাজে কিংবা স্কুলে যেতে দিচ্ছে না তালেবান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *