আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধে প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি


২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল আল কায়দা। বিমান হামলায় টুইন টাওয়ার ধসিয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া সেই আল কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে সে দেশে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনীর অভিযান শুরু হয়।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে- এই স্লোগানে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আফগানিস্তানে তখন যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, তার অবসান ঘটল ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাত দিয়ে। আর এর মাঝে ২০ বছর গড়িয়ে গেছে, হোয়াইট হাউজে আরও দুজন প্রেসিডেন্টের আসা-যাওয়া ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্র যত যুদ্ধ করেছে, তার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ইতির পর এখন শুরু হয়েছে হিসাব কষার পালা।

রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক লাভালাভের হিসাবের বাইরে এই যুদ্ধে যত প্রাণহানি ঘটেছে, যত খরচ যুক্তরাষ্ট্রের হয়েছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুলের লিন্ডা বিমস এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা থেকে।

তবে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে চালানোয় ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে কিছু ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে গেছে।

প্রাণহানি

>> বেসামরিক আফগান নিহত হয়েছে ৪৭ হাজার ২৪৫ জন।

>> যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত বাহিনীর সৈন্য নিহত হয়েছে ২ হাজার ৪৬১ জন।

>> সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৬ জন।

>> নেটোসহ অন্য আইএসএএফভুক্ত অন্যান্য দেশের সৈন্য নিহত হয়েছে ১ হাজার ১৪৪ জন।

>> আফগানিস্তানের সৈন্য ও পুলিশ মিলিয়ে নিহত হয়েছে ৬৬ হাজার জন।

>> তালেবানসহ আফগান বিভিন্ন সশস্ত্র দলের যোদ্ধা নিহত হয়েছে ৫১ হাজার ১৯১ জন।

>> দাতব্য সংস্থার কর্মী নিহত হয়েছে ৪৪৪ জন।

>> সাংবাদিক নিহত হয়েছে ৭২ জন।

আহত ও উদ্বাস্ত

>> গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ লাখের মতো সৈন্য আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে ৬ হাজার আহত হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য।

>> যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে আফগানিস্তানে ঘর হারিয়েছে ৬০ লাখের মতো মানুষ।

অর্থ ব্যয়

আফগানিস্তানে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ৩১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচার হিসাব দেওয়া হয়েছে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’র তথ্যে।

তবে যেসব সৈন্য আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য আগামীতে যে ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হবে, তা হিসাব করলে খরচ আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে হিসাব দেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক লিন্ডা বিমস।

আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে যে দেনা করতে হয়েছে, তার সুদের যে জের ২০৫০ সাল অবধি টানতে হবে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ ব্যয় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

যার মানে দাঁড়ায়, ময়দানের যুদ্ধ শেষ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের খরচের খাতা এখনই বন্ধ হচ্ছে না।

,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *