আফ্রিকার রহস্যময় বুনো কুকুর


আফ্রিকার হিংস্র পশুদের মধ্যে বুনো কুকুর বেশ রহস্যজনক প্রাণী। এদের সংরক্ষণের এক বিশাল উদ্যোগ চলছে। প্রায় ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে সাভে উপত্যাকায় তৈরি করা হয়েছে অভয়ারণ্য।

এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেসিকা ওয়াটারমায়ার। তারা এদের ‘ফেস্টিভ প্যাক’ নামে ডাকেন। কারণ এদের শরীরে অত্যন্ত সুন্দর, স্বতন্ত্র ও রঙিন চিহ্ন রয়েছে। গোটা অভয়ারণ্যে সবচেয়ে বড় পালে বর্তমানে কুকুরের সংখ্যা ১১। শুরুতে ১২টি ছিল। ১৪টি শাবক ছিল, এখন মাত্র সাতটি অক্ষত রয়েছে। দিনের বেলা উচ্চ তাপমাত্রা এড়াতে বুনো কুকুর ছায়ায় পড়ে ঘুমায়। বিকালের দিকে গোটা দল একত্রিত হয়। তারপর শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে।

আফ্রিকা মহাদেশে যেসব মাংসাশী প্রাণী হুমকির মুখে, বুনো কুকুর রয়েছে এদের মধ্যে। সাভে উপত্যকা এদের জন্য অন্যতম প্রধান আশ্রয়স্থল। টিকে থাকার জন্য এদের অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়। ইম্পালা অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণই এদের প্রধান খাদ্য। এগুলো আসলে খুব সামাজিক প্রাণী। এরা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে, পরস্পরের দেখাশোনা করে, শাবকের যত্ন নেয়। সিংহের মতো সামাজিক মাংসাশী প্রাণীর তুলনায় এরা খুবই অন্যরকম। এরা শিকার করার পর সবার আগে শাবকদের খেতে দেয়। কেউ আহত হলে তার দেখাশোনা করে। আহত কুকুরের কাছে মাংস নিয়ে যায়।

অভয়ারণ্যের বাইরে এখন অনেক এলাকায় ঝোপঝাড় লোপ পাচ্ছে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে চাষবাস ও পশুপালনের জন্য জমির ব্যবহারও বাড়ছে। সংঘাত বাড়ছে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যেও। বুনো কুকুরদের বিপদের মাত্রাও বেড়েছে। চোরাশিকারিরা তারের ফাঁদ বসিয়ে অ্যান্টিলোপ ধরার কাজ করে। বুনো কুকুররা সেই ফাঁদে পড়ে বেঘোরে প্রাণ দেয়। শিকারিদের এ উপদ্রব থেকে কুকুরদের বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন জেসিকা ওয়াটারমায়ার। তাদের স্কাউটরা স্থানীয় র‌্যাঞ্চ বা খামারের স্কাউটদের সঙ্গে কাজ করেন। তারা গোটা এলাকা চষে ফেলে যত বেশি সংখ্যক তারের ফাঁদ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। যদিও সেটা খুবই কঠিন কাজ। ঘন ঝোপের মধ্যে এমন তারের ফাঁদ প্রায় অদৃশ্য হয়ে থাকে। তা ছাড়া এলাকাটিও বেশ বড়। একবার একটি জায়গা থেকেই রেঞ্জাররা প্রায় ৫০টি তারের ফাঁদ সংগ্রহ করেছেন। তারা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ একমাত্র আফ্রিকা মহাদেশেই এই কুকুর পাওয়া যায়।

অন্যান্য পশু সংরক্ষণে আফ্রিকায় সফলতা আসছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রজাতির কুকুরও সংরক্ষণ করা কর্তব্য বলে মনে করছেন জেসিকা ওয়াটারমায়ার ও তার লোকজন। জিনগতভাবে বুনো কুকুর সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি। একবার এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *