বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কমরেড মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, জাফর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সকল আন্দোলন সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলো। সে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে। বামপন্থীদের একত্রিত করার জন্যে সে খুবই আগ্রহী থেকে কাজ করেছে। বাম ঐক্যের ক্ষেত্রে সে দৃঢ ছিল। ধীরস্থির, মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন একজন দৃঢচেতা লোক। তাঁর মতো দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা দরকার। বাংলাদেশে আজ ভয়াবহ সংকট। এই সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়ে গেছে। এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে, রুখে দাড়াতে হবে।
তিনি শুক্রবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নাগরিক শোকসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জাফরের মতো নেতা বিপ্লবী নেতা চাই। কমরেড জাফরের মতো সংগ্রামী ও বিপ্লবী নেতা তৈরী করতে হবে। বিপ্লবের মধ্যদিয়েই সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে। কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ আজীবন সাম্যবাদী আন্দোলনের এক লড়াকু জননেতা। সারাজীবন মানুষের প্রকৃত মুক্তির জন্যে কাজ করেছেন, লড়াই করেছেন। আপস করেনি, মাথানত করেনি। সে সার্বক্ষনিক একজন রাজনীতিবিদ ছিল।
নাগরিক শোকসভার শুরুতে প্রয়াত কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটি, নাগরিক শোকসভা প্রস্তুতি কমিটি, যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট, খেলাঘর সিলেট, প্রগতি লেখক সংঘ সিলেট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদ। পরে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গানের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হয়।
কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমনের পরিচালনায় নাগরিক শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাবিবুল ইসলাম খোকা। সভার শুরুতে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের স্মৃতি ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শোকসভায় কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী পাঠ করেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক কমরেড খায়রুল হাছান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক শোকসভা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড আবিদ আলী।
শোকসভায় বক্তব্য রাখেন প্রয়াত কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের সহধর্মিনী কাওছার পারভীন ডলি, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি কমরেড বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাসদ সিলেটের সভাপতি লোকমান আহমদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দল সিলেটের কমরেড ধীরেন সিংহ, সিপিবি সুনামগঞ্জ কমিটির সভাপতি কমরেড চিত্তরঞ্জন তালুকদার, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড উজ্জ্বল রায়, ওয়ার্কাস পার্টি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সিকন্দর আলী, কমিউনিস্ট পার্টি মৌলভীবাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু, সাবেক সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, ন্যাপ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন, বাসদ সিলেটের নেতা প্রণবজ্যোতি পাল, গণফোরাম সিলেট মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনছার খান, কমিউনিস্ট পার্টি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ, প্রবীণ কমরেড প্রভাংশু চৌধুরী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটের কৃষি অনষদের ডীন প্রফেসর আবুল কাশেম, মদনমোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিপিবি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ সিলেটের সভাপতি এ কে শেরাম, খেলাঘর সিলেট জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বী ওয়াফি, যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দাশ খোকন, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি সরোজ কান্তি দাশ।
নাগরিক শোকসভা শেষে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের স্মৃতি ও কর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন সিলেটের পরিবেশনায় গণ সংগীতের মধ্যদিয়ে শোকসভা সমাপ্ত হয়।
বক্তারা বলেন, কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের মতো শত ও বিপ্লবী নেতা আমাদের হতে হবে। নয়ত সংগ্রাম বিপ্লবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। কমরেড আবু জাফরের পথ অনুস্মরণ করে তৃণমুল থেকে ঐক্যবদ্ধ বাম আন্দোলন জোড়ালো করতে হবে। সিলেট থেকে বিপ্লব ও আন্দোলনের সুর উঠবে সমাজতন্ত্রের, মানুষের মুক্তির।