বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রীর খেতাব পাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংসদে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংসদদের তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি এই খেতাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
সংসদে স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি কোষাগারে নেয়া সংক্রান্ত ‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন-২০২০’ বিলটি পাসের বিরোধিতা করে সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপিরা সংসদ সদস্যরা। এ সময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বিলটি পাসের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাব করলে তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এই আইন পাসের ফলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত টাকা সরকার নিতে পারবে।
পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অন্যায় করেছে বিচারে নিয়ে যাব। তবে সংসদে তাকে ‘ব্যবসায়ী’ বলে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে বলেও উম্মা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল।’
ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যাংক খাত ধুঁকতে থাকার মধ্যে এই আইন করা হলে তা এটি ‘কালো আইন’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপিরা সংসদ সদস্যরা। শেয়ারবাজারে ধস, অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না কেন, সে প্রশ্ন তুলে তারা অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের সমালোচনা করেন।
জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ মজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সরকারের অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী হলে যা হয় তাই হয়েছে।’
জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এতক্ষণ অনেক বক্তব্য শুনলাম। এসব শুনতে ভালো লাগেনি। উনাদের এসব শুনতেও ভালো লাগবে না। একবার চিন্তা করে দেখেন, সাইফুর রহমান (সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান) চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন। আমিও তাই। আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। পারসোনাল লেভেলে কথা বলবেন, এটা ঠিক নয়। আমিও অনেক কিছু বলতে পারি। সবার বিষয়েই আমি জানি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা নিজেদের সম্মান দিতে জানেন না। অন্যদেরও সম্মান দিতে জানেন না। কথা বলবেন ঠিক আছে, কিন্তু এভাবে আপনারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলবেন? আপনাদের সবার সম্পর্কে আমার জানা আছে। এটা ঠিক না।’
এ সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে সরকারি দলের এমপিরা কথা বলতে বললে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না না, আমি তাদের নাম বলব না। এ রকম শিক্ষা আমি নেইনি। এজন্য আমি বলব না।’
পরে তার বক্তব্যের পর মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমি একজন অ্যাডভোকেট। এটা বললে কি অপরাধ হবে? উনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কিন্তু উনার মূল পরিচয় একজন ব্যবসায়ী। এটাতে আহত হওয়ার কারণ নেই। আমরা আশা করেছিলাম, সাকসেসফুল বিজনেসম্যান, অর্থনীতিতে ভালো করবেন। কত দূর ভালো করেছেন উনি চিন্তা করবেন। ব্যাংকের মালিক-ডিরেক্টররা ঋণ নিয়ে বসে আছেন। এটা কি দেশ? টাকা পাচার হয় উনি ব্যবস্থা নেন না। বিভিন্ন সংস্থার টাকা খরচ করছেন। আগামী বছর ট্যাক্স না পেলে কী করবেন?’
সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে আমাকে বেস্ট লেবার মিনিস্টারের অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল। কেন যে দিয়েছিল, তা আমি জানি না।’
প্রসঙ্গত, গেল বছরের শেষে লন্ডনভিত্তিক ‘দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ গ্রুপের সাময়িকী ‘দ্য ব্যাংকার’ বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ‘ফাইন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ২০২০’ ঘোষণা করে।