নওগাঁয় আলুর ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম বেশি পেয়ে খুশি কৃষক। কৃষকরা আমন ধান কাটার পর একই জমিতে আলু চাষ করে অতিরিক্ত অর্থ আয় করছেন। এতে আমন ধান চাষে ঘাটতি অর্থ পুষিয়ে নেয়ার পাশাপাশি একই জমিতে তিন ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা। কৃষি অধিদফতরের মতে, এ বছর নওগাঁয় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নওগাঁর প্রধান অর্থকরী ফসল ধান। পাশাপাশি সবজির আবাদও হয়। গত ইরি-বোরো এবং চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হন। অনেক কৃষক ধান চাষ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তও নেন। কিন্তু কৃষি অধিদফতরের অনুপ্রেরণায় অনেক কৃষক ধানের জমিতে এবার আলু চাষ করেন।
বর্তমানে ক্ষেত থেকে উঠতে শুরু করছে আলু। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা ক্ষেত থেকে গাছসহ আলু কিনে শ্রমিক দিয়ে উত্তোলন করছেন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েক দফা বৃষ্টিতেও আলুর ক্ষতি হয়নি। বৃষ্টি হওয়ায় সুবিধা হয়েছে আলুর জন্য। এতে কৃষকদের বাড়তি সেচের প্রয়োজন হয়নি।
পাকরি, রোমানা, কার্ডিনাল (লাল), গ্যানোলা, ব্যানোলা, ক্যারেজ এবং ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় জাতের আলুর চাষ হয়েছে। পরিপক্ক হওয়ায় মাঠ থেকে আলু উঠাতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
ধামইরহাট উপজেলার ধানতাড়া গ্রামের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, ইরি-বোরো ধান কাটার পর এক একর জমিতে আলু চাষ করেছি। ৬৫ দিনের মধ্যে আলু পরিপক্ক হয়েছে। পাইকাররা আমার এক একর জমির আলুক্ষেত ৭৫ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন। আলু চাষে আমার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। স্বল্পসময়ে ৪৫ হাজার টাকা আয় করেছি। বর্তমানে ওই জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি।
উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক লিটন রহমান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে যে আবহাওয়া শুরু হয়েছিল তাতে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। কারণ জমিতে বেশি সময় পানি জমে থাকলে আলু পচে যায়। পরে আবহাওয়া ভালো হয়েছে আলুরও ফলন ভালো হয়েছে।
সদর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ১৫ কাঠা জমিতে দেশি আলু করেছি। এ জাতের আলু বিঘা প্রতি ভালো হলে ৪৫-৫০ মণ হয়। সার, ওষুধ, জমি চাষ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় বিঘা প্রতি প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা। বাজারে আলুর দাম ভালো আছে। দেশি আলু কম পরিমাণ উঠছে। তবে ভুটান ও পাপড়ি জাতের আলু প্রতি মণ ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। এছাড়া অন্যান্য আলুর মণ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সে হিসাবে আলুর কেজি ১৪ টাকায় বিক্রি করছি আমরা।
ধামইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বিগত ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেকটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকদের আলুসহ অন্যান্য শাকসবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বাজারে আলুর দাম ভালো পেয়ে কৃষকরা বেশ উপকৃত হয়েছেন। বর্তমানে এলাকার কৃষকরা একই জমিতে বছরে তিন ফসল উৎপাদন করছেন। এর মধ্যে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর জেলায় ২০ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৯ হাজার ৭৪০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি আলু ১৮ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সে হিসাবে এ বছর জেলায় মোট ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৭ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে, কারণ আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।