আশাজাগানিয়া শুরু, হতাশায় শেষ


প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়ে কী দারুণভাবেই না বিশ্বকাপ শুরু করেছিলো বাংলাদেশ! সেমিফাইনালের যে লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপে রওয়ানা দিয়েছিলো টাইগাররা, প্রথম ম্যাচে জিতে সেই স্বপ্ন আরও বড় করে তুলেছিলো তারা।

দ্বিতীয় ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে গেলেও সেই পরাজয়েও ছিলো প্রাপ্তি। ছিলো শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ের ছাপ। তবে পরের ম্যাচেই খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের সাথে হেরে যায় বড় ব্যবধানে। আর শেষ দুই ম্যাচে ভারত আর পাকিস্তানের সাথে হেরে হতাশায়ই শেষ হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন।

৯ ম্যাচে ৩ জয়ে বাংলাদেশ এখন পয়েন্ট তালিকায় সপ্তম। শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেলে আটে নেমে যাবে টাইগাররা। শেষ চারে খেলার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিলো যারা, তাদের ৭/৮ নম্বরে হয়ে বিদায় নেওয়া তো হতাশারই।

এমন হতাশার মধ্যে উজ্জ্বল ছিলেন একজনই। সাকিব আল হাসান। পুরো বিশ্বকাপে দারুণ খেলে নিজের জাত জিনিয়েছেন বিশ্বেসরা এই অল রাউন্ডার। ছয় শতাধিক রানের পাশাপাশি তুলে নিয়েছেন ১১ টি উইকেট। বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়েই রয়েছেন সাকিব।

এক সাকিব ছাড়া এই বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি কেউ। একটি সেঞ্চুরিসহ তিনটি ম্যাচে মুশফিক রান পেলেও মোটেও ধারাবাহিক ছিলো না তাঁর ব্যাট। সবচেয়ে অনুজ্জ্বর ছিলেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আর বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারও হতাশায় ডুবিয়েছেন।

পুরো টুর্নামেন্টেই বাজে ফিল্ডিংয়ের খেসরাত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কয়েকটি ম্যাচে ক্যাচ মিস-ই তো ব্যবধান করে দিয়েছে। বিশেষত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়াটসন, ভারতের বিপক্ষে রোহিত শর্মা আর পাকিস্তানের বিপক্ষে বাবর আজমের ক্যাচ ফেলে দেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। জীবন পেয়ে বড় সংগ্রহ করেছেন এই তিনজনই।

পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচ আর মাঝের ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচ ছাড়া বাকীগুলোতে ব্যাটসম্যানরা তবু আশা জাগিয়েছেন। তবে পুরো টুর্নামেন্টেই হতাশ করেছেন বোলাররা। ২০ উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ। মাঝেমাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। তবে বড্ড খরুচে ছিলেন তিনি। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার লজ্জ্বার রেকর্ডই গড়ে ফেলেছেন তিনি। ২০ উইকেট নিতে মোস্তাফিজ খরচ করেছেন ৪৮৪ রান। নিয়মিত উইকেট পেলেও রান দেওয়ার ক্ষেত্রে সাইফুদ্দিনও ছিলেন উদার। তবে সবচেয়ে হতাশ করেছেন দলনেতা মাশরাফি। পুরো টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচ খেলে তাঁর উইকেট মাত্র ১টি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে যার নেতৃত্বগুণের অবদানকে সর্বাগ্রে স্বীকার করা হয়, যিনি দলের সেরা বেলারও, তার এমন পারফলম্যান্স হতাশ করেছে টাইগার ভক্তদেরও। ফলে বিশ্বকাপজুড়েই সমালোচনায় ছিলেন তিনি। মাশরাফির অবসরের কথাও উচ্চারিত হয়েছে জোড়েসোড়ে।

শেষ ম্যাচে তিনি খেলবেন কী না এই নিয়ে গুঞ্জন ছিলো ম্যাচের আগ মূহূর্ত পর্যন্ত। তবে শেষ মূহূর্তে মাঠে নামলেও ফিরতে পারেননি ফর্মে। যথারীতি উইকেট শূন্য ছিলেন এ ম্যাচেও।

শুক্রবার ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত ঐতিহাসিক লর্ডসে পাকিস্তানের কাছে তো পাত্তাই পেল না মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। পারলো না বিশ্বকাপের শেষটা মনের মতো করতে। হতাশাজনক বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংটাও আশানুরূপ না হওয়ায়, শেষ ম্যাচের ফলটাও এসেছে নেতিবাচক।

অথচ এ দলটিই বিশ্বকাপের সেরা বাংলাদেশ দল। এ নিয়ে কারও দ্বিমত ছিল না। প্রথম পাঁচ বিশ্বকাপের চেয়ে অভিজ্ঞ দল, সম্ভাব্য সেরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও আশানুরুপ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষদুই ম্যাচে তো হতাশই হয়েছেন ভক্তরা।

নিউ জিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ব্র্যান্ডন ম্যাককুলাম ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন- বিশ্বকাপে মাত্র এক ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ। এমন ভবিষ্যতবাণী করে ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছিলেন সাবেক এই কিউই অধিনায়ক।

তাঁর ভবিষ্যতবাণী সত্য না হলেও শেষপর্যন্ত খুব একটা এগোতে পারেনি টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আফগানিস্তান- এই তিন দলের বিরুদ্ধে জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ। আর হারতে হয়েছে নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও পাকিস্তানের সাথে।