আসলে আমার ছেলেটা বোকা, এজন্য বলির পাঠা : শোভনের বাবা

banglashangbad

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য পদচ্যুত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তার বাবা নূরুন্নবী চৌধুরী।

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি আমার ছেলেকে চিনি। সে এ ধরনের কাজ করতে পারে না। আসলে আমার ছেলে আগে থেকেই বোকা, সহজ-সরল। শোভন এরকম খারাপ ছিল না। সে সাদাসিধে ও অত্যন্ত সরল প্রকৃতির ছিল। এ কারণেই তাকে একটি চক্রের বলির পাঠা হতে হলো।

শোভনের অব্যাহতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রোববার বিকেলে এসব বলেন নূরুন্নবী চৌধুরী। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

শোভনের বাবা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে। তার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তিনি নিজেই শোভনকে পছন্দ করে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আবার নিজেই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তার সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে।

শোভনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের অনেক কিছুই সাজানো মন্তব্য করে নূরুন্নবী চৌধুরী বলেন, শোভনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনেকটা অতিরঞ্জিত, সাজানো ব্যাপার বলে আমার কাছে মনে হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি নিয়ে ভিসির অভিযোগ প্রসঙ্গে শোভনের বাবা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে আসলে শোভন কিছুই জানে না। সেখানে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেন সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক হয়। আমার ছেলেকে নিয়ে যে আর্থিক বিষয়গুলো বলা হচ্ছে, সেটা তার দ্বারা সম্ভব নয়। সে পরিস্থিতির শিকার, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছি, ঘটনাস্থলে ওই দিন শোভন ছিল না। রাব্বানীরা তাকে পরে ডেকে নিয়ে যায়। শোভন উদ্ভূত পরিস্থিতি মীমাংসার জন্য সরল বিশ্বাসে সেখানে যায়। অথচ অর্থ কেলেঙ্কারিতে তাকে ফাঁসানো হলো।

শোভনের বাবা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে কথা বলার সময় রাব্বানী যেহেতু একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, সেখানে শোভন উপস্থিত থাকায় হয়তো তার নামও এসেছে। কিন্তু রাব্বানী নিজেই বলেছে, শোভন কিছু জানে না।

শোভনকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আক্ষেপের কিছুই নেই। নেত্রী ভালো মনে করেছিলেন, তাই তাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, পদে বসিয়েছিলেন। নেত্রী এখন মনে করছেন যে এদের দিয়ে আর ভালো চলবে না, তাই তাদের পদত্যাগ করতে বলেছেন।

নূরুন্নবী চৌধুরী আরও বলেন, আওয়ামী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে এ বিষয়টির কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি আমাদের সামান্যতম শ্রদ্ধা কমবে না।

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ এক বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে আসে।

এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও আছে।

এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে। এসব দেখে এবং শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন।

সবশেষে শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা জয়-লেখক এর আগে সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *