ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ৪৭ বছরের সম্পর্কের অবসান


ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা যতই বলুন যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে না তাদের, কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রেক্সিট (ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকরের পর কোনো কিছুই আগের মতো থাকবে না আর। তিনি একে যুক্তরাজ্যের জন্য নবযুগের সূচনা হিসেবে অভিহিত করেন।

গত তিন বছরের বেশি সময় ব্রিটিশ রাজনীতির নানা টানাপোড়েন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বিদায় ও বারবার ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে ব্যর্থ হওয়ার পর গত বছরের শেষে আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে অবশেষে ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আঞ্চলিক জোটে এটাই প্রথম ভাঙনের ঘটনা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অবশেষে ব্রেক্সিট কার্যকর হচ্ছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটিশ রাজনীতি এই ব্রেক্সিটের ঘোরাটোপে আটকে ছিল। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এটাকে যুক্তরাজ্যের জন্য নতুন এক যুগের ভোর হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গত বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা (এমইপি) যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদের শর্তগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার পর আজ শুক্রবার অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সময় রাত ১১টায় ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) কার্যকর হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইইউর সঙ্গে ৪৭ বছরের সম্পর্কের যবনিকাপাত ঘটছে যুক্তরাজ্যের।

বিচ্ছেদ কার্যকরের আগে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় বলা হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ কার্যকরের আগে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঘোষণা করবেন, ‘এটা কোনো কিছুর শেষ নয় বরং নতুন কিছুর শুরু।’ ইইউ জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসাকে ‘সত্যিকারের জাতীয় পুনর্জাগরণ ও পরিবর্তনের মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

ইউরোপ তথা বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই জোট থেকে প্রথমবারের মতো কোনো দেশ তার সদস্যপদ প্রত্যাহার করছে। তবে ব্রেক্সিটের পর জোটের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা ঠিক করার জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে যুক্তরাজ্য। এই সময়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক থাকবে আগের মতোই। এটাকে বলা হচ্ছে ‘রুপান্তর কাল’।

ব্রেক্সিট কার্যকরের দিনটি (মূলত রাত) উদযাপনের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়ে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসনের ব্রিটিশ সরকার। সরকারের পাশাপাশি মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে ব্রিটিশ নাগরিকরাও। শুক্রবার মধ্যরাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটবে। তবে এতে ব্রেক্সিটবিরোধীরা খুশি নন।

বেক্সিট উপলক্ষে ৫০ পেনির ৩০ লাখ মুদ্রা বাজারে ছাড়া হয়েছে। মুদ্রার পিঠে লেখা রয়েছে, ‘শান্তি, সমৃদ্ধি ও সকল জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব।’ আগামী বছরের মধ্যে এমন আরও ৭০ লাখ মুদ্রা বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ব্রেক্সিট কার্যকরের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসের হাতে এমন একটি মুদ্রা তুলে দেবেন।

স্থানীয় সময় রাত ১০টায় ব্রেক্সিটের এক ঘণ্টার ক্ষণগণনার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দেয়ালে আলোর ঘড়ি ভেসে উঠবে। এছাড়া দেশটির পার্লামেন্টের ভবনগুলো সাজবে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। উড়বে যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকা। ঠিক ১১টার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের ৫২ শতাংশ মানুষ ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার পক্ষে রায় দেন। আজকের এই ‘মাহেন্দ্রক্ষণে’ তারা শামিল হবেন উদযাপনে। তবে যে ৪৮ শতাংশ মানুষ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তাদের জন্য আজকের দিনটি শোকের। এছাড়া দেশটির অনেক আইনপ্রণেতাও ঘোরতর বেক্সিটবিরোধী।

ব্রেক্সিট বিরোধী দ্যা গ্রিন পার্টির মলি স্কট ক্যাটো কাঁদতে কাঁদতে দেয়া বক্তব্যে জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন তার দেশ একদিন ঠিকই ইউরোপীয় ইউনিয়নে আবার ফিরে আসবে। তবে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী দল বেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ ও তার সহকর্মীরা শেষ সময়ে এসেও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তুলোধুনো করতে ছাড়েননি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *