ইউটিউব থেকে ডলার আসে, আয় হয়। রান্না রেসিপি থেকে আসে, হিরো আলমদের নাটক থেকে আসে, ওয়াজ মাহফিল থেকেও আসে। যেটা বেশি দর্শক দেখে সেটার ইনকাম তত বেশি। মাসে লাখ লাখ টাকাও কেউ কেউ পায়। সবচেয়ে বেশি আয় করেন যারা ওয়াজ করেন তারা, আবার তাদের ওয়াজ রেকর্ড করে নেটে ছেড়ে দেন তারাও এই আয় পকেটে পুরেন।
ইউটিউব তাদের কিছু শর্ত পূরণ করলে ডলার দেয় এটি একসময় আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু আমার ছোটভাইতুল্য বন্ধু তাজুল ওল্ডমডেলের প্রিন্টার মেরামতের সফটওয়্যার বানিয়ে, টেকনিক, ট্রিকস্ এর ভিডিও নিজস্ব ইউটিউব একাউন্ট বা আইডিতে ছেড়ে, সরিষা ক্ষেত থেকে মধু আহরণের ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে যেদিন ১০০ ডলারের মত পেয়ে খুশিতে বিরিয়ানি খাইয়ে আমাকে সব বোঝাল, ডলার পাওয়ার ডকুমেন্টগুলো দেখালো। ওর আইটেমের দর্শক, এবং দেখার মোটসময় কম বলে আয়ও কম।
এ নিয়ে এত কথা বললাম কেন সেটা বলি। গত একবছর যাবত নানা মানুষের ওয়াজের বয়ানে ইউটিউব সয়লাব হয়ে গেছে বলে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত, হায় হায় কি শুরু হল! হঠাৎ করে মূর্খ, উগ্র, অর্বাচীন কিংবা শিক্ষিত ওয়াজেনরা দেশ ছেয়ে ফেললো কী করে!
বলিকি এমন ওয়াজ মাহফিল শত বছর ধরেই চলছে। এসব রেডিও টিভিতে আসতো না বলে আমরা জানতাম না। এখন মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে জানছি। আর ইউটিউবে ওয়াজ মাহফিলের এইযে জোয়ার তার নেপথ্যে কিন্তু ওই যে বললাম ইউটিউব থেকে আয়, ডলার। কোন ফাঁকি নেই পেমেন্টে। ফলে ওয়াজ, রান্নার রেসিপি থেকে শুরু করে হিরো আলমের ফটকা নাটকেরও বিশাল বাজার, বিশাল দর্শক অনলাইনে সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে কিছুরই সুনামি বয়ে যায়নি।
প্রায় প্রতিটি টিভি, পত্রিকার অনলাইন ভার্সন আছে, ইউটিউব আছে। তাতে নাটক চলে, খবর, টকশো চলে। এটা তাদের আয়ের বড় উৎস, সেটা কি জানেন? সবই প্রযুক্তির সুফল, কুফল, আর কিছু না।
সবশেষে বলি অনেকেই ইউটিউবে ওয়াজের আধিক্যে আতঙ্কিত, শঙ্কিত। ইউটিউবের ওয়াজ নিয়ে শঙ্কা আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ, এই দেশে ওয়াজ মাহফিল শতবর্ষ ধরেই চলছে। এখন প্রযুক্তির কল্যাণে জানছি বলে মনে হচ্ছে ধর্মের গোড়ামিতে দেশে ডুবে গেলো।
এত ভয়ের কোন কারণ নেই। এটাই বাংলাদেশ। যেখানে ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার মানুষ হয়, আবার জেমসের কনসার্টেও হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়, গানের সঙ্গে নাচে।
এখনও মেলায়, আসরে বিচারগান, জারিগান কবি গান শোনার জন্য দশ বিশ মাইল দূর থেকে হাজারও মানুষ সমবেত হয়, গান শুনে কাঁদে।
পহেলা বৈশাখে সেজেগুঁজে এমনকি হিজাব পরেও হাতে ফুল নিয়ে রাস্তায় নামে লাখো মানুষ। ভালবাসা দিবসে শহরতো শহর, গ্রামের ছেলে মেয়েরাও নতুন সাজে সেজে বেড়াতে বের হয়।
একটা হিসাব মাথায় রাখেন এদেশে মোটামুটি জেনুইন ইলেকশনে ধর্মভিত্তিক দলগুলো কোনকালে ৫% এর বেশি ভোট পায়নি। দেশের মানুষ সবই শুনে, বুঝে কিন্তু গোড়ামি আর ধর্মান্ধতাকে শেষবিচারে পরিত্যাগ করে।
অতএব, অহেতুক ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদের কালচারের শক্তিটা অন্তর্গত, প্রবহমান। এটাকে উল্টে ফেলা এতসহজ না।