উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল


বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে মূল্যবান কাঠ পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সিলেট অঞ্চলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ পাচারের সঙ্গে জড়িত বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এরা বনদস্যুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে সরকারি সম্পদ লুটপাট করে চলেছে। অব্যাহতভাবে বনাঞ্চল উজাড় করায় পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেখা দিচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়। দেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। সেই সঙ্গে গড়ে উঠছে আবাসিক ভবন। বনাঞ্চল উজাড় করে তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি। জরিপের তথ্য হচ্ছে দেশে ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকায় জনপ্রতি জমির পরিমাণ মাত্র ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, স্কুল কলেজ, কলকারখানা। বাড়ছে জমির বহুমুখী ব্যবহার। এজন্য প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি জমির। তাই হাত পড়ছে বনজঙ্গলের ওপর। বন উজাড় করে তৈরি হচ্ছে ফসলি জমি।

আমাদের এই বনাঞ্চল রক্ষায় যতোই উদ্যোগ নেয়া হোক না কেন, ব্যর্থ হচ্ছে তার সবই। বরং প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ অভিযানের সময় যতো বৃক্ষ চারা লাগানো হয়, তার উল্লেখযোগ্য অংশই বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে সার্বিকভাবে বৃক্ষ সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে। একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য স্বাভাবিক রাখার জন্য আয়তনের ২৫ শতাংশ বন বা গাছপালায় আচ্ছাদিত থাকার কথা। জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা এবং জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য জলবায়ুর স্থিতিশীলতা এবং পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখার জন্যই কমপক্ষে এই পরিমাণ জমিতে গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা অন্যরকম। বর্তমানে দেশের ৭ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর বা আয়তনের মাত্র ছয় শতাংশ এলাকা বন বা গাছ পালায় আচ্ছাদিত।

তবে সরকারি হিসেবে এর পরিমাণ ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। হিসেবের এই গরমিল থাকলেও বাস্তবচিত্র হচ্ছে, বাংলাদেশের বনাঞ্চল ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। দেশের ৫০ ভাগ বনাঞ্চল উজাড় হয়েছে গত ২০ বছরে। সরকারি বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে, ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষ সম্পদ কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তচক্র। এক কথায়, দেশে সরকারি বনাঞ্চলে সারা বছরই বৃক্ষ সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব চলতে থাকে।

যে হারে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং যে হারে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই দশক পরে দেশে কতোটুকু আবাদি জমি কিংবা কতোটুকু বনভূমি অবশিষ্ট থাকবে সেটা বলা মুশকিল। সুতরাং এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি। আর তার জন্য প্রথমেই বৃক্ষ সম্পদ ধ্বংসের সবধরনের কর্মকান্ড বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে সচেতন হতে হবে দেশের মানুষকেও। সরকারি বনাঞ্চল ধ্বংস করছে বনদস্যুরা। এটা ঘটছে অনেক সময় প্রকাশ্যেই। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশেপাশের অধিবাসীরা সচেতন হলে কাঠ পাচার রোধ করা সম্ভব। বন বিভাগের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিবাজ। এদের অপসারণ না করলে সরকারি বনাঞ্চল রক্ষা করা যাবে না। অচিরেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হোক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *