সিলেট প্রধানতম বাণিজ্যিক এলাকা জিন্দাবাজার। কোনো না কোনো কারণে বছরই জিন্দাবাজার সড়কে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। কখনো কালভার্ট মেরামত, কখনো ড্রেন বর্ধিতকরণ। এখন চলছে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ। প্রায় ৫ মাস আগে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু করলেও এখনো কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। কেবল খোঁড়াখুঁড়িই চলছে।
শুধু জিন্দাবাজার নয় নগরের বেশিরভাগ এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ চলছে। কোথাও ড্রেন নির্মান, কোথাও সড়ক বর্ধিতকরণের কাজ চলছে। ফলে উন্নয়নের নামে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বর্ষা মৌসুমে নগরজুড়ে এমন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী।
এই ভোগান্তি নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রয়েছে নানান অজুহাত। সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের কাজ শুরু করতে হয়েছে ডিসেম্বর মাসের পর। কাজ শুরুর পরই আগাম বৃষ্টিতে বাধাগ্রস্ত হয় কাজের গতি। এখন বর্ষাকাল চলমান। তাই বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ কাজই বন্ধ আছে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত বাজেট পেতে বিলম্ব হওয়ায় চলমান উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের আগে চলমান এসব উন্নয়ন কাজ পুরোদমে শুরু হবে না। ফলে এমন দুর্ভোগ পুরো বর্ষকালই পোহাতে হবে নগরবাসীকে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ড্রেন, সড়ক মেরামত, খাল ছড়া সংরক্ষণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে ভারতীয় অর্থায়নে ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অধীনে বেশ কিছু কাজ হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু কাজ বন্ধ রয়েছে আর বিদেশী অর্থায়নের কাজগুলোর বরাদ্দ না পাওয়ায় ওইসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে। ফলে রাস্তা খুঁড়েই ফেলে রাখা হয়েছে।
এদিকে নগরবাসী বলছেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমের আগে শুরু হয় উন্নয়ন কাজ। যার ফলে সড়কে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতার মাশুল দিতে হয় সাধারণ জনগণকে।
সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ অনার্স (অর্থনীতি) ২য় বর্ষের নাজিবা বলেন, বন্দরবারজার-চৌহাট্টার এই সড়কটি আমাদের জন্য অভিশপ্ত হয়ে গেছে। সারা বছরই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলে এখানে। এসব খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে প্রচুর জ্যাম হয়। কোর্ট পয়েন্ট থেকে চোহাট্টা পর্যন্ত রিকসায় আসতে অনেক সময় ২০ মিনিট লেগে যায়। পায়ে হেঁটেও আসা যায় না। কারণ ফুটপাত দখল করা। তার উপর খোঁড়াখুঁড়ির জন্য রাস্তার পাশ দিয়েও হাঁটা যায় না। আর বৃষ্টি হলেতো কোনো কথাই নেই। জ্যাম, কাদা মিলে নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায় পথচারীদের।
একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, নগরের এমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কাজ দ্রুত গতিতে করানো উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে কাজের যে গতি দেখছি তাতে মনে হয় না সহজে এই সড়কের কাটছেরা শেষ হবে। এখন আমরাতো নিরুপায় কারণ আমাদের কলেজে আসতে হবে।
জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই উন্নয়নের জোযারে ভাসতে হয় আমাদের। তার উপর সড়কে যে পরিমাণ খোঁড়াখুঁড়ি চলছে তাতে সড়কে পা ফালানো মুশকিল। সামনে ঈদ, তখন ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়বে। এসব উন্নয়ন কাজ শীতকালে কেন করা হয় না সেটা আজও বুঝলাম না। বৃষ্টির দিন আসলেই উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়। এসব কাজ বর্ষার আগে শেষ হলে আমাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উন্নয়ন কাজের সময় কিছু জনভোগান্তি হয়। এই ভোগান্তি শুধু সিলেটে না, সারা দেশেই হচ্ছে। উন্নয়ন চলমান থাকলে ভোগান্তিও কিছু থাকবে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি জনগণের ভোগান্তি কমাতে। কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতি সব সময় আমাদের অনুকূলে থাকে না।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কারণে অনেক কাজ আমরা ডিসেম্বরের পর শুরু করেছি। এর মধ্যেই আগাম বৃষ্টির কবলে পড়তে হয়েছে। এখনতো পুরো বর্ষা তাই বেশিরভাগ কাজই পুরোপুরি বন্ধ আছে। শুধু যে বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ আছে তা কিন্তু নয়। বিদেশি অর্থায়নে অনেক প্রকল্প চলমান আছে। সেই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ না আসার কারণেও অনেক কাজ বন্ধ আছে। বিভিন্ন কারণে ঠিকাদারদেরও ২ মাস যাবত আমরা কোনো টাকা দিতে পারছি না। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বরের আগে কোনো কাজ ভালো ভাবে শুরু করা যাবে না।
জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছে এই সড়কে। এই কাজে আমরা সম্পৃক্ত নই। আমাদের কাছ থেকে শুধু রোড কাটিংয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এটা পিডিবি করছে। আমরা তাদেরকে তাগিদ দিচ্ছি তাড়াতাড়ি এই কাজ শেষ করার জন্য।