একটি ফটোর জন্য ৩০ বছর আগে মারা যাওয়া বাবার দেহাবশেষ তুললেন ছেলে


আন্তজাতিক ডেস্ক :: ৩০ বছর আগে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বাবা। এতদিন পর ছেলের শখ হলো বাবার দেহাবশেষের সঙ্গে ছবি তুলবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ইট-সিমেন্টের তৈরি সমাধিস্থল ভেঙে ফেলে বের করে আনলেন বাবার দেহাবশেষ।

এখানেই শেষ নয়। নগ্ন হয়ে দেহাবশেষের সঙ্গে ছবি ওঠালেন। পরে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও ছিলেন। এমন ঘটনা ঘটেছে চীনে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম সুইয়ান ঝুজু (৩৩)। ডাকনাম সি লুলু। তিনি পেশায় একজন চিত্রকর।

তিনি সমাধিক্ষেত্রের তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাবার সমাধি ভাঙার কাজ শুরু করে। তার এ কাজে কয়েকজন সহযোগিতা করে। পরে সমাধিস্থল থেকে একে একে বের করে আনা হয় দেহাবশেষগুলো। পরে সেগুলো সাজিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালে রূপ দেয়া হয়। এরপরই বাবার কঙ্কালের পাশে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে পড়েন। তোলা হয় কয়েকটি ছবি। তার ছবি তোলাতে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী লিন শান।

চীনা সংবাদমাধ্যম বেইজিং নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সি লুলুর অনেক আগে থেকেই একটি স্বপ্ন ছিল-তার বাবার হাড়গুলো পাশে রেখে ছবি উঠাবেন। মার্চের শেষের দিকে ছবিগুলো তোলা হয়েছে। ছবি তোলার উপলক্ষ হিসেবে চীনের ঐতিহাসিক কুয়িং মিং ফেস্টিভ্যালকে (যাকে ইংরেজিতে টম্ব সুইপিং ডে বলা হয়) বেছে নেন।

টম্ব সুইপিং ডে-তে চীনারা তাদের পূর্বপুরুষদের বিশেষভাবে স্মরণ করে থাকেন।

বাবার সঙ্গে বিভিন্ন পোজে ছবিগুলো তোলার পর গত শনিবার চিত্রকর্মবিষয়ক ওয়েবসাইট আর্ট্যান্ড ও চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে ছড়িয়ে দেন সি লুলু। পোস্ট করার পর ছবিগুলো এ পর্যন্ত ২৮০ লাখ বার দেখা হয়েছে।

তবে সমাধি থেকে বাবার দেহাবশেষ তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ সমালোচনাকারীই বলছেন, তিনি যা করেছেন তা রীতিমতো মৃতদের প্রতি ‘অসম্মান’ প্রদানের বহিঃপ্রকাশ ও অত্যন্ত ‘লজ্জাজনক’। নিজে রাতারাতি খ্যাতি লাভ করতেই তিনি এমন পন্থা অবলম্বন করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘আপনি যদি খ্যাতি লাভ না করতে এসব করে থাকেন তাহলে ছবিগুলো অনলাইনে দিলেন কেন? ঘরে ঝুঁলিয়ে রাখলেই তো পারতেন।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘আপনি বাবার দেহাবশেষ সমাধি থেকে তুলে পাশে শুয়ে ছবি তুলেছেন-এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। আপনি তা করতেই পারেন। তবে আপনি সীমা অতিক্রম করেছেন তখনই যখন ওই ছবি ক্যামেরার সাহায্যে তুলেছেন।’

তবে এ ঘটনায় বেশিরভাগ ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হলেও ওই ব্যক্তিকে বাহবা দিয়েছেন কেউ কেউ। তারা এ ঘটনাকে অত্যন্ত ‘হৃদয়স্পর্শী’ বলে অভিহিত করেছেন।

এ বিষয়ে চিত্রকর সি লুলুর ভাষ্য, এটা ছিল অসাধারণ। তিনি এটা করার মাধ্যমে তার বাবাকে অনেক কাছ থেকে তার নিজের মতো করে অনুভব করেছেন। কারণ এর আগে তিনি তার এ বাবাকে এত কাছ থেকে অনুভব করতে পারেননি।

নগ্ন হয়ে ছবি তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এর মাধ্যমে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, আমরা নগ্নভাবেই পৃথিবীতে এসেছি এবং এভাবেই আমাদের পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *