কমছে না শীত-কুয়াশা, নষ্ট হচ্ছে বীজতলা


তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে দিনাজপুরে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা শীত ও কুয়াশার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বীজতলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও ভালো ফল না পেয়ে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছেন। এভাবে চললে এবার দিনাজপুরে বোরো ধানের চারার সংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা কৃষকদের।

দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কৃষক বৈদ্য চন্দ্র রায় বলেন, বোরো ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশায় বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন করে আবারও বীজতলা তৈরি করতে হবে। আবার যারা পৌষের ৮-১০ তারিখে বীজতলা তৈরি করে বীজ ফেলেছেন তারা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন শীত ও কুয়াশা থেকে বাঁচানোর জন্য। কুয়াশা কমছে না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি।

রানীগঞ্জ গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশার কারণে মরে গেছে। এবার বীজের অভাবে বোরো ধানের আবাদ করা যাবে কি-না তা বুঝতে পারছি না।

 

বীজতলা রক্ষায় বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে

রামডুবি গ্রামের কৃষক দয়ারাম রায় বলেন, কৃষকরা বীজতলা রক্ষার জন্য ছত্রাকনাশক ব্যাভিস্টিন, স্কোর, ডুডু, থিওভিটসহ বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

সদর উপজেলা, খানসামা, বীরগঞ্জ ও চিরিরবন্দরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন কৃষকরা। যারা পলিথিন কিনতে পারেননি তারা খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছেন। কেউ কেউ বীজতলায় ছাই ছিটিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করছেন।

অধিকাংশ কৃষক জানান, পৌষের শুরুতে যেসব বীজতলায় ধানের বীজ বোনা হয়েছিল সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এখন বপন করা ধানবীজ থেকে জন্মানো চারা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার দিনাজপুরে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ওসব বীজতলার চারা দিয়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হবে।

 

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শীত ও কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদি এরকমই আবহাওয়া থাকে ও বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যায় তাহলে প্রতি শতকে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এরপরও যদি না হয় তাহলে প্রতি শতকে ১০ গ্রাম হারে জীবসাম সার দিলে বিবর্ণ হওয়া কেটে যাবে। দেরিতে বপন করা বীজতলাগুলোর চারা শীত ও কুয়াশায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা করে রোদ পাওয়া গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।

পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যারা বীজতলা তৈরি করছেন তাদেরকে শুকনা বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। আবার অনেকে শীত ও কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। এটা আধুনিক প্রযুক্তি, ক্ষতির কোনো কারণ নেই।