করোনা: অসচ্ছল পরিবারের পাশে গ্রামবাসী


মহামা‌রি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব বন্ধ থাকায় কাজ পাচ্ছে না খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। এমন অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রামবাসী। অসচ্ছল পরিবারের কাছে পৌঁ‌ছে দিয়েছে খাদ্যসামগ্রী। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নি‌য়ে‌ছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামবাসী।

সম্প্রতি গ্রামের ১১৫টি পরিবারকে উপহার সামগ্রী হিসেবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর পুরো অর্থ সহায়তা করেছেন গ্রামের সচ্ছল বাসিন্দারা।

উপহার হিসেবে ১৫ কেজি চাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি আলু ও ১ কেজি ছোলা দেয়া হয়েছে। এসব খাদ্যসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন তারা। ফলে সহয়তার জন্যে তাদের দাঁড়াতে হয়নি কোনো লাইনে।

জানা গেছে, গ্রামের আর্থিক সচ্ছল ব্যক্তিরা নিজেদের অর্থায়নে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো সংগ্রহ করেন। পরিবারগুলো উপহার সামগ্রী দেয়ার পরও কিছু অর্থ থেকে গেছে। তা দিয়ে ঈদুল ফিতরে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তার লক্ষ্য রয়েছে গ্রামবাসীর।

জানতে চাইলে মাইজবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা এস এম ওয়াহিদুর রহমান বাদল বলেন, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে গ্রামের সবাই এগিয়ে এসেছেন। বাইরে যারা থাকে, চাকরি ও ব্যবসা করেন তারা গ্রামের বয়স্কদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ উদ্যোগ নেয়। যে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে তাতে অনেক পরিবারের হয়তো ১৫ দিনের সমস্যা লাঘব হবে। অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারাও এমন উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে শুধু চাকুরিজীবী নয়, সমাজে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যক্তি রয়েছেন। সবাই এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসায় আমরা উচ্ছ্বসিত। ভবিষ্যতেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রামে অব্যাহত থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

শিক্ষক আতাউর রহমান দিদার বলেন, শ্রমজীবী যারা আছেন, দিন আনে দিন খায়, করোনার কারণে তাদের কষ্ট হচ্ছিল। সরকারের যথেষ্ট সহয়তার পরও গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আমরা এ উদ্যোগ নিই। আমাদের এই সম্মিলিত প্রয়াস তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমাবে বলে বিশ্বাস করি। দেশের অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারাও যদি এভাবে এগিয়ে আসেন, নিজ গ্রামের মানুষের পাঁশে দাঁড়ান, তাহলে করোনার প্রভাব মোকাবিলা কিছুটা হলেও সহজতর হবে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী এমদাদুল হক তুহিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের গ্রামের বাসিন্দারা বিপদের সময় এক অপরের পাশে দাঁড়ান। সমাজে প্রতিষ্ঠিত গ্রামের ধনী ব্যক্তিরা সব সময় এগিয়ে আসেন। গ্রামের বয়স্ক ও ধনীদের পাশাপাশি ঈদ ও পার্বনে এলাকার তরুণরা তাদের সাধ্যমত প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এবারের সম্মিলিত এই উদ্যোগটি গ্রামের মুরব্বিরা নিয়েছেন। তরুণসহ সব বয়সী মানুষ এতে অংশ নেয়। দেশের প্রতিটি এলাকায় যদি একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে করোনা মোকাবিলা যেমন সহজতর হবে, তেমনি অসচ্ছলদের কষ্টটাও কিছুটা দূর হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *