চীনের পর করোনার ছোবলে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইতালি। দেশটির সরকার প্রথমে করোনাভাইরাসকে পাত্তা না দেওয়ায় এই করুণ অবস্থা। প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছেন বড় বড় তারকারা। অনেকেই নানা আর্থিক সাহায্য দিয়ে পাশে থাকছেন। তবে ইতালির জেব্রে রাগবি ক্লাবের ফ্ল্যানকার ম্যাক্সিম এমবান্দা যা করছেন, তা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে দৈনিক ১৩ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমবান্দা বলেন, ‘রাগবি খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমি ভাবতে থাকি চিকিৎসা দক্ষতা ছাড়াই কীভাবে সাহায্য করতে পারি। এরপর আমি ৮ দিন আগে এটা (অ্যাম্বুলেন্স চালানো) শুরু করি এবং কোন বিরতি ছাড়া দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করছি। সংক্রামক রোগীদের কক্ষে আমি যা দেখছি তাতে আমি নিজেকে বলি আমাকে কখনোই ক্লান্ত হওয়া চলবে না।’প্রতিদিনই ইতালিতে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এ নিয়ে ভয় থাকলেও সেটা জয় করে সবাইকে নিরাপদ রাখতে চান এমবান্দা, ‘ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তবে কিছু ছোট জিনিস রয়েছে যা দিয়ে নিরাপদে করা যায়। এবং সামনের সারীতে যারা থাকছে তাদের মাঝে মধ্যে এক-আধ ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়া যায়। তাদের জন্য প্রতি ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ আমার শক্তি আছে, আমি চালিয়ে যাব। আমি এখানে আছি এবং এখানেই থাকব।’
এমবান্দার বাবা একজন শল্যচিকিৎসক। তার নির্দেশেই এমবান্দা তার ক্লাব জেব্রের প্রবীণদের সাহায্য করার লক্ষ্যে এই কাজ শুরু করেন। এমবান্দা বলেন, ‘আমি প্রথমে খাদ্য ও মেডিক্যাল সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্ত হই। কিন্তু পরে আমি ভাইরাসে আক্রান্তদের এক একটি স্থানীয় হাসপাতাল থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার কাজ করি। আমি স্ট্রেচার ধরে মাঝে মধ্যে হুইল চেয়ারের রোগীদের কোলে করে তুলি। আমি আক্সিজেনও ধরে রাখি।’
নিজের কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘আপনি যদি তাদের চোখের দিকে তাকান… তারা কখনো কখনো কথাও বলতে পারে না। তারা আপনাকে চোখের ভাষায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করবে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না। প্রথম যে ব্যক্তিকে আমি এনেছিলাম তিনি বলেছিলেন, তার পাশের বেডের রোগী মারা যাওয়ার পর তিন ঘণ্টা সে পাশের বেডে ছিল। সে সময় আরও দুই জন মহিলা মারা যায়। এর আগে সে কখনোই কাউকে মরতে দেখেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যা দেখেছি তা যদি সবাই দেখত তাহলে কেউ সুপারমার্কেটের সামনে সামান্য সময় ব্যয় করতো না। তারা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একবার, দুইবার, তিনবার ভাবত। আমি সব বয়সী রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখেছি। অক্সিজেনের মধ্যে থাকতে দেখেছি। দেখেছি কীভাবে ডাক্তার-নার্সরা কোন ঘুম ছাড়া দিনে টানা ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা কাজ করছেন। পরদিন কিছু বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন।’