করোনা কেড়ে নিল এমপি কয়েসকে, টিকা নিয়েছিলেন এক মাস আগে


বাংলা সংবাদ ডেস্ক:করোনা মহামারির সময় যখন বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। করোনার শুরু থেকে সার্বক্ষণিক এলাকায় অবস্থান করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জনগণের দিকে। এমন সাহসী ভূমিকা রাখা জনপ্রতিনিধি এক মাস আগে করোনার টিকাও নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও  শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদ বলেন, ‘তাঁকে ৭ মার্চ (রবিবার) রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন তিনি। বিকেলে ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য কয়েসের মরদেহ আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারে করে ফেঞ্চুগঞ্জে আনা হবে। বিকেল ৫টায় স্থানীয় কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

একাধিকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য কয়েস ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচিত ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিল তিনিই প্রথম সংসদে উত্থাপন করেন। ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর উত্থাপিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

করোনা মহামারির শুরুতে নিজ এলাকাসহ দেশব্যাপী আলাদাভাবে আলোচনায় আসেন মাহমুদ উস সামাদ কয়েস। করোনার ভয়াবহতার শুরুতে যখন বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি নিজেদের গুটিয়ে নেন চার দেয়ালের ভেতর, তখন মাহমুদ উস সামাদ হাঁটেন উল্টোপথে। গত বছরের ২২ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার কয়েক দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে নিজ সংসদীয় এলাকায় চলে আসেন এবং সেখানে অবস্থান করে গরিব, অসহায়দের জন্য কাজ করতে থাকেন। শুধু সরকারি ত্রাণ সহায়তা বণ্টন নয়, নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেন তাঁর আসনের তিন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত।

স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ নানা কাজে সরাসরি নিজেকে ব্যস্ত রাখেন সারা দিন। বেদে সম্প্রদায়, গাড়িচালক, চা শ্রমিক থেকে শুরু করে যারাই কাজের অভাবে সংকটে পড়ে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি প্রবাসী অধ্যুষিত ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার অনেক প্রবাসী তখন দেশে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না, এ সময় তিনি নিজের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করার আহ্বান জানিয়ে রাখেন এবং যে প্রবাসীরা সাহায্য চাইতেন তাঁদের বাড়িতে গোপনে নিজের লোকজন দিয়ে খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়ে দিতেন।

করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ঢাকায় যাওয়া-আসা শুরু করলেও এলাকাতেই থাকছিলেন বেশির ভাগ সময়। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি সিলেটে আসেন এবং মার্চ মাসের শুরু থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সংসদীয় এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সর্বশেষ ৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর রায়খাইল সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ আয়োজিত হেলাল চৌধুরী ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ রাজনৈতিক নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *