কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত: গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের এমডির জামিন

banglashangbad

প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কারণে চাকরিচ্যুত করায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার আবু আবেদীন।

আজ রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। সেই সঙ্গে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

আদালতের পেশকার নুরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১৯ জুন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের দুই কর্মচারী বদরুল আলম ও জিল্লুর রহমান তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। এরপর আদালত আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন।

মামলার দুই বাদী গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে বদরুল আলম প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- গ্রামীণ কমিউনিকেশন; প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার আবু আবেদীন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মামলার বাদী বদরুল আলম ২০০৪ সালের এপ্রিলে ও জিল্লুর রহমান ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে এম আই এস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে কাজে যোগদান করেন। শ্রমিক হিসেবে নিজেদের সংগঠিত হওয়া ও নিজেদের কল্যাণের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তারা।

সে অনুযায়ী নিজেরাসহ অন্যান্য শ্রমিক সহকর্মীদের নিয়ে ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (প্রস্তাবিত)’ নামে একটি ইউনিয়ন গঠন করেন এবং তা আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন।

২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল ট্রেড ইউনিয়নটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য মহাপরিচালক ও রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়নে আবেদন করেন। ৯ জুন তা প্রত্যাখ্যান হয়। মামলার বাদী বদরুল আলম প্রস্তাবিত ইউনিয়নের সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সদস্য ছিলেন।

মামলার আসামিরা ইউনিয়নের বিষয় জানতে পারলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে এবং স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করতে থাকে।

বাদীর প্রতি এরূপ অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে নানা ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। আসামিদের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বেআইনিভাবে বাদীদের প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখেন। কোনো কারণ ছাড়াই বাদীদের চাকরি থেকে টার্মিনেট করেন।

বিষয়টি তারা লিখিতভাবে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকে অবগত করেন। পরে কাজের বিষয়ে বহুবার যোগাযোগ ও অনুনয়-বিনয় করলেও বাদীদের প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আসামিরা শুধু ইউনিয়ন গঠন করার কারণে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করে কাজ থেকে বিরত রেখেছেন এবং বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন, যা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৮৬ এবং ১৯৫ (ঘ) ধারার লঙ্ঘন।

উল্লেখ্য, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সার্টিফাইড, গ্রামীণ ব্যাংকের একমাত্র আইটি প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স’ সারা বাংলাদেশে ২৫৬টি তথ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে আইটি সেবা দিয়ে থাকে। গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে ১০০০ কর্মী রয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ায় সবার মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। কমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষ বারবার মৌখিক আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি।

গত ১৬ এপ্রিল প্রায় ৫৫০ জন কর্মী সংগঠিত হয়ে ঢাকার শ্রম অধিদফতরের ট্রেড ইউনিয়নের শাখায়, ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের’ (প্রস্তাবিত) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন।