কলকাতায়ও করোনাভাইরাসের হানা, হাসপাতালে চীনা তরুণী


চীনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। চীন ছাড়াও বিশ্বের কমপক্ষে ১০টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ভারতে বেশ কয়েকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কলকাতায়ও এ ভাইরাসের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এক চীনা তরুণী ভর্তি হয়েছেন।

রোববার ওই চীনা তরুণী জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তার শারীরিক পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের নমুনা মেলেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে হলে আরও পরীক্ষা করতে হবে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।

ওই চীনা তরুণীর নাম হুয়ামিন। ছয় মাস আগে ভ্রমণের উদ্দেশে চীন থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। পরে তিনি নামিবিয়া, মরিশাস, মাদাগাস্কার হয়ে ভারতে আসেন। ২৪ জানুয়ারি থেকে তিনি কলকাতায়।

সাধারণ ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। চীনের বাসিন্দা হুয়ামিন যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন সে আশঙ্কায় তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্র বলছে, হুয়ামিনের জ্বর আছে; তবে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই। তবে শ্বাসনালীতে কোনো সংক্রমণ হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে। তিনি যেহেতু ছয় মাস আগেই চীন থেকে অন্য দেশে চলে গেছেন তাই তার শরীরে করোনা সংক্রমণ নেই বলেই মনে করেন চিকিৎসকদের একাংশ।

আরও একটি সংশয়ও তৈরি হয়েছে। যেসব দেশ ঘুরে হুয়ামিন কলকাতায় এসেছেন, সেখান থেকেও কোনোভাবে করোনাভাইরাস তার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে বলে ধারণা চিকিৎসকদের। প্রয়োজনে তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পুণের ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অব ভাইরোলজিতে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষার পর বোঝা যাবে, হুয়ামিন করোনায় আক্রান্ত কিনা।

ইতোমধ্যে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৮০ জন। প্রায় তিন হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে চার শতাধিক আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।

এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। চীনে প্রাদুর্ভাব ঘটলেও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *