কারখানা শ্রমিককে হত্যা বাবা-ছেলেসহ তিনজন জড়িত


মুক্তিপণ না পেয়ে এক কারখানা শ্রমিককে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাবা-ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার ইয়াকুব শেখ (৬০), তার ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল (২৫) ও রাজশাহীর পুঠিয়া থানার কান্দা গ্রামের শামছুল মন্ডলের ছেলে মো. শামীম (২২)।

গ্রেফতারকৃতদের শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

নিহত অহিরুল ইসলাম পাবনার আটঘড়িয়া থানার ভরতপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কালিয়াকৈর পৌরসভার কাঠাতলা এলাকার আ. মালেকের বাড়িতে বাসা ভাড়া থেকে স্থানীয় ময়েজ উদ্দিন টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে আসছিল।

কালিয়াকৈর থানা পুলিশে ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, কারখানা শ্রমিক অহিরুল ইসলাম গত ৬ আগস্ট রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি পাবনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে যান। কিন্তু তিনি পাবনা নিজ বাড়িতে পৌঁছায়নি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে বিভিন্নস্থানে অনেক খোঁজাখুঁজিও করা হয়েছে। এ সময় অহিরুলের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পায় পরিবারের লোকজন। এরপর অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি গত ১২ অগাস্ট রাত সাড়ে ৯টায় এবং ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে অহিরুলের মুঠোফোন থেকে নিহতের চাচাতো ভাই পাঞ্জাব আলীকে ফোন করে। পরপর দুই দিনই ওই ব্যক্তি মুঠোফোনে জানায়, অহিরুল তার হেফাজতে আছে তাকে নিতে হলে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। দাবিকৃত টাকা না দিলে অহিরুলকে হত্যা করে লাশ গুম করা হবে বলেও হুমকি দেয়।

পরে নিহতের চাচাতো ভাই পাঞ্জাব আলী গত ২০ কালিয়াকৈর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। তার মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার কান্দা এলাকা থেকে শামছুল মন্ডলের ছেলে শামীমকে গ্রেফতার করে। শামীম চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ইয়াকুব শেখের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানায়, বাড়িওয়ালা মালিক ইয়াকুব শেখ, তার ছেলে মো. কালাম ও কামরুজ্জামান ওরফে কামরুলের সহযোগিতায় অপহরেণের একদিন পর ৭ আগস্ট অহিরুলের হাত-পা এবং মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ইয়াকুব শেখের বাড়ির নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে পুলিশ ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি করে কোনো লাশের সন্ধান পায়নি তবে সেপটিক ট্যাংকে দুর্গন্ধ ছিল। পরে পুলিশ বাড়িওয়ালা ইয়াকুব শেখ ও তার ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে কামরুলকে আটক করে। এ সময় অপর ছেলে মো. কালাম সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়।

পরে ইয়াকুব শেখ ও তার ছেলে কামরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা পুলিশকে জানায়, হত্যা মামলা থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য ইয়াকুব শেখ এবং তার দুই ছেলে মিলে বুধবার সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ তুলে তাদের বাড়ির পাশে একটি ডোবায় নিয়ে ফেলে দেয়া হয়। পরে পুলিশ শুক্রবার রাতে সেই ডোবা থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে গ্রেফতারকৃত তিনজনই শুক্রবার গাজীপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।