সিলেটের ছাত্ররাজনীতির এক সময়ের দাপুটে এই নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর লিখিত এক চিঠিতে তিনি বলেন সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি গঠনে ‘মতামতকে উপেক্ষা’ করায় তিনি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জামান বিভিন্ন সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এই নেতা পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ১৯৮৫ সাল থেকে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে তিনি বিএনপিতে যুক্ত হন। বিএনপির দুর্দিনে এই দলকে প্রতিষ্ঠা করতে জীবনের সোনালী সময় সাধ্যমমো সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন। সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝে দলকে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেছেন।
“আমি কখনোই হালুয়া রুটির ভাগীদার হয়নি; কিংবা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করিনি।”
তিনি উল্লেখ করেন, “অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো মঙ্গলবার [১৭ অগাস্ট] সিলেট জেলা ও মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষিত হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমার জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষিত হল আমার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে।”
পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর সংবাদ সম্মেলনে জামান বলেন, তার `মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা’ করে সদ্য ঘোষিত সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জামানের এই পদত্যাগ নিয়ে টালমাটাল এখন সিলেট বিএনপি। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পর সিলেট বিএনপি’র চাপা ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে এসেছে। সিলেট বিএনপি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। এক ধারায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও অপর ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সিলেটে অবস্থানরত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আরিফ বলয়ের নেতারা জানিয়েছেন, পরপর দুইবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির অপর বলয়ের তেমন সহযোগিতা পাননি। দুইবার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এখন সিলেট-১ আসনেও চোখ রয়েছে আরিফুল হক চৌধুরীর।
এ কারণে সিলেট বিএনপির নিয়ন্ত্রক খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী এখন একে অপরের দূরত্বে অবস্থান করছেন। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে অনেকটা স্বতন্ত্র ভূমিকায় সিলেটের রাজনীতির আলোচিত নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান।
মামলার পর মামলায় বিপর্যস্ত হওয়ার পর তিনি চলে গিয়েছিলেন ব্যাকফুটে। এই সময়ে প্রথমে সিলেটে ছাত্রদলকে সাজাতে গিয়ে জামান অনুসারীদের ‘মাইনাস’ প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে যুবদল, এরপর জেলা বিএনপি এবং সর্বশেষ স্বেচ্ছাসেবক দলে জামান অনুসারীদের বাদ দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জামান।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “জামান তার ক্ষোভ থেকে পদত্যাগ করেছে। যখন ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলে অবমূল্যায়িত হয় তখন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।”
সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেছেন, “অনেক সময় হয়তো ত্যাগীরা মূল্যায়িত হন না। কিন্তু দলের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে আজ হোক আর কাল হোক কাজের মূল্যায়ন হবেই। আন্দোলন সংগ্রামে জামানের অনেক অবদান আছে, কিন্তু দলের বিরুদ্ধে সে যেভাবে বিতর্কিত কথা বলেছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। অভিমান করে তার দলত্যাগ উচিত হয়নি।”