কেয়ামতের দিন আল্লাহ যাদের সঙ্গে কথা বলবেন না


আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন একদল লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। এ সব লোকেরা মূলত ঈমানের দাবিদার। কী সে অপরাধ? যে অপরাধের কারণে আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবে না! হ্যাঁ আল্লাহ তাআলা সে কথাই কুরআনে পাকে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাজিল করেছেন এবং সে জন্য (সঠিক কথার বিনিময়ে তারা) অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৪)

আল্লাহর কুরআনের সে বাণী গোপন করার মিশন আজও অব্যাহত। সঠিক কথার বিপরীতে এ জাতির অনেক মনগড়া কথা বলে বেড়ায়। হালাল-হারামসহ সঠিক আক্বিদা বিশ্বাস থেকে মানুষকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়ার মিশনে আজও কাজ করে অনেক মানুষ।

সঠিক আক্বিদা বিশ্বাস থেকে মানুষকে গোমরাহির পথে পরিচালিত করতে যারাই কাজ করবে তারাই এ আয়াতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

যদিও এ আয়াতটি ইয়াহুদিরকে লক্ষ্য করেই নাজিল করা হয়েছিল। তারা ইসলাম ও ইসলামের নবির সত্যতা জানার পরও তা মানুষের কাছে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ সিদ্ধির আশায় গোপন করতো। তাদর ব্যাপারেই কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে যে-
>> তারা আগুণ দিয়ে পেট ভর্তি করে।
>> কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
>> তাদেরকে পবিত্র করবেন না। এবং
>> বেদনাদায়ক শাস্তি শুধু তাদের জন্য নির্ধারিত।

মানুষের জন্য বড়ই দুঃসংবাদ যে-
আলোচ্য আয়াতের আলোকে শুধু ইয়াহুদিরাই নয় বরং কালেমায় বিশ্বাসী অনেক মুসলমানও এ আয়াতের হুকুমের আওতায় চলে আসবে। চূড়ান্ত তাওবা করে ফিরে না আসলে, তাদের সঙ্গেও আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না। তাদের নিজেদের পেটও আগুনে পরিপূর্ণ হবে। তাদেরকেও আল্লাহ তাআলা পবিত্র করবেন না এবং তারাও ভোগ করবে জাহান্নামের বেদনাদায়ক শাস্তি।

কারণ, তারাও ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও অবিশ্বাসীদের মতো আল্লাহর বিধানকে জানা স্বত্ত্বেও গোপন করে। কিংবা আল্লাহর হুকুম আহকামকে সামান্য লাভের আশায় বা দুনিয়ার শান-শওকতের আশায় মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকে।

আর ইসলামের সুন্দর জীবনাদর্শকে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের ভংগুর জীবনকে উন্নত জীবন মনে করে নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়নে অবিরাম নিয়োজিত।

ইসলামের সুন্দর আদর্শের বিপরীতে তারা সন্ধ্যায় বারে গিয়ে মদ গিলছে। স্বাধীনতার নামে নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা ও উৎসব উদযাপন করছে। অভিজাত এলাকায় জুয়ার আসর জমাচ্ছে। সুস্বাস্থ্য রক্ষার নামে সুইমিংপুলে বেহায়াপনা ও পার্কে ঘোরাফেরা করছে।

নিজেকে অনিন্দ সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য নারী-পুরুষ সমানতালে পাতলা ও সুন্দর পোশাকের নামে উলঙ্গপনায় মেতে উঠছে। অবৈধভাবে নাচেগানে একত্রিত হচ্ছে বন্ধু-বান্ধব।

অথচ তারে জানে আসলেই এ জীবনাচার সত্য ও সঠিক নয়। তারা সত্য জেনেও তা নিজেদের জীবনেই গোপন করছে। আর তাদের দেখায় দেখায় অন্যরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তাদেরকে আইডল মনে করছে।

আর এসব কারণেই আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের ময়দানে এসব রুচি ও কর্ম সম্পাদনকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন না।

সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের উচিত কুরআনের সত্য ও সঠিক মতাদর্শে নিজেদের পরিচালিত করা। হালাল ও হারাম মেনে চলা। কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামি জীবন-জিন্দেগি যাপন করা। আর তাতেই দুনিয়াতে মিলবে অনাবিল শান্তি ও নিরাপত্তা। আর আখেরাতের সীমাহীন জীবনের সুখেও ঘটবে না কোনো বিচ্যুতি।

পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাদের পরিচয় আরও সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
এরাই হল ওই সব লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী কিনেছে এবং ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে (কিনেছে) আজাব। অতএব, (দেখা যাবে) তারা দোজখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৫)

অর্থাৎ প্রতিদিনের নামাজ পড়ছে কিংবা শুক্রবারের নামাজ আদায় করছে আবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের নামে কিংবা কোনো আয়োজনে অবাধ অশ্লীলতায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে।

সুন্দর ও উচ্চ ইসলামি নাম ধারণ করে বংশ মর্যাদা ও আভিজাত্যের অজুহাতে কুরআনের নির্দেশনা পরিপন্থী অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে নিজেকে জড়িত করছে। ইসলাম কোনোভাবেই যেগুলোকে সমর্থন করে না বা অনুমদোন দেয় না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও হাদিসের আলোকে দ্বীনের সত্যগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সীমাহীন সুখ শান্তি লাভের তাওফিক দান করুন। পরকালের চূড়ান্ত দিন আল্লাহর দিদার লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *