কোম্পানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ কালী মন্দির পরিদর্শনে এসপি ফরিদ


গত শুক্রবার রাতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পুর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা নওয়াগাঁও গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ অস্থায়ী কালী ও শিব মন্দির।

পরিদর্শন করেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।

এসময় তার সাথে ছিলেন- গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম, ওসি সজল কানু, কোম্পানীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অকিল চন্দ্র বিশ্বাস। মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এটা নিছক দূর্ঘটনা। শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘটে যাওয়া অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ মন্দিরটি সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীরাও পরিদর্শন করেছেন।

রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় সরেজমিন মন্দির পরিদর্শন কালে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক লোক এ প্রতিবেদককে জানান, প্রায় ৫ যুগের অধিক সময় থেকে শিমুলতলা নওয়াগাঁও গ্রামে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা উক্ত স্থানে চার/পাঁচ ফুট আয়তনের খড়ের ঘর তৈরি করে

অস্থায়ী ভাবে প্রতিমা রেখে তারা কালী ও শিবের প্রার্থনা করেন। শুকনো মৌসুমে ৫/৬ মাস এখানে তারা ধর্মীয় কার্যক্রম চালান। বর্ষায় প্রতিমাটি তারা স্থানান্তরিত করে বাড়ীতে নিয়ে যান। ধলাই নদীর তীরবর্তী শিমুলতলা নওয়াগাওঁ দক্ষিণ সড়কের উত্তর পার্শ্বে মাঝারি আকারের জারুল গাছের নিচে ৪/৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের ছোট একটি অস্থায়ী মন্দিরে তাদের প্রতিমা রাখা ছিল। মন্দিরের উচ্চতা ৫/৬ ফুট। খড়ের ভেড়া ও বিন্না পাতার ছানী ছিল ওই মন্দিরের উপরে। কিভাবে ওই মন্দিরে আগুন লেগেছিল এই প্রশ্নের উত্তরে উক্ত গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী

জানান, মন্দিরে সন্ধ্যায় তারা প্রদ্বীপ দেন। এই আগুন অথবা রাস্তার কোন পথ যাত্রীর বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে তাদের ধারণা। মন্দিরে আগুন লাগার বিষয়টি সর্বপ্রথম কে দেখেন এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় এলাকার একটি সমিতির সভা শেষে বাড়ী ফেরার পথে শিমুলতলা নওয়াগাওঁ গ্রামের রিংকু, বিকাশ ও কাজল দাস মন্দিরে আগুন লাগার বিষয়টি সর্বপ্রথম দেখেন এবং তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা
করেন। অগ্নিকান্ডে অস্থায়ী মন্দিরটি পুড়ে ছাই হলেও মন্দিরে রাখা কালির প্রতিমা সম্পূর্ণ অক্ষত থেকে যায়। প্রতিমার কোন ক্ষতি না হওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসী মধ্যে রহস্যের সৃষ্টি হয়। স্থাপিত অস্থায়ী মন্দিরটির জমির মালিক তেলিখাল, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও তেলিখাল গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির আহমদ। দীর্ঘদিন থেকে এই জমিতে মন্দির স্থাপন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় নানা উৎসব পালন করে আসলেও জমির মালিক কোন প্রকার বাধা বিপত্তি করেননি।

স্থানীয়দের ধারণা জমিটুকু দখলের উদ্দেশ্যে স্থানীয় একটি চক্র নাটক সাজিয়ে জমি দখল ও সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। এই ঘটনার পর স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নিন্দার ঝর বইছে। প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম মন্দির পরিদর্শন কালে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সৃষ্টি করে ছিলেন তা আজও বিদ্যমান রয়েছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে উস্কানী দেয়ার লক্ষ্যে হয়ত কোন চক্র এ ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ইতি মধ্যে পুলিশ বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

তিনি এলাকাবাসীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে উক্ত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উম্মেচন হবে। প্রকৃত দোষীদের খোঁজে বের করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *