খুব কম দামে করোনার টিকা আনব, পৌঁছে দেব বিশ্বে


ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিকঅ্যাসিড) ভেক্টর ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছে। লন্ডনের ঐতিহ্যশালী ইম্পিরিয়াল কলেজের গবেষণা আবার আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজি নিয়ে। কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্রিটেনে এখন আশা জাগাচ্ছে অক্সফোর্ড এবং ইম্পিরিয়াল কলেজ অব লন্ডন। খবর দ্য ওয়ালের।

আগামী ১৫ জুন থেকে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করবে ইম্পিরিয়াল কলেজ। গবেষকরা জানিয়েছেন, গত দু’মাসে ল্যাবরেটরিতে পশুদের শরীরে এই আরএনএ ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে সাফল্য মিলেছে। এবার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করতে চায় তারা। সরকারি অনুমোদনেই প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০০ জনের শরীরে ওই ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হবে। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেই অক্টোবরে প্রায় ৬ হাজার জনের উপরে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বৃহত্তর কর্মসূচী নেওয়া হবে।

ইম্পিরিয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘খুব কম দামে ভ্যাকসিন বাজারে আনা হবে। বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেব আমরা। অক্টোবরের ট্রায়ালে ভাল ফল দেখা গেলে কোটি কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি হবে। বিশ্ব বাজারে ওই টিকা পৌঁছে দিতে ভ্যাকইকুইটি গ্লোবাল হেলথ (VGH)নামে একটি কোম্পানিও খুলেছে ইম্পিরিয়াল কলেজ।
জানা গেছে, এই উদ্যোগে তাদের পাশে রয়েছে লাইফ সায়েন্স ইনভেস্টর হংকংয়ের মর্নিংসাইড। ইম্পিরিয়াল ও মর্নিংসাইড যৌথ উদ্যোগে আরও একটি স্টার্টআপ কোম্পানি খুলেছে যার নাম ভ্যাক্সইকুইটি (VXT)। ভিজিএইচ ও ভিএক্সটি-র সাহায্যে সারা বিশ্বেই কোভিড ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইম্পিরিয়াল কলেজ।

কী ধরনের ভ্যাকসিন বানাচ্ছে ইম্পিরিয়াল কলেজ অব লন্ডন?
ইম্পিরিয়াল কলেজের ভ্যাকসিন গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক রবিন শ্যাটক। তিনি জানিয়েছেন, ‘সেলফ-অ্যাম্পলিফাইং আরএনএ টেকনোলজি’ ব্যবহার করে ভ্যাকসিন বানানো হচ্ছে। সেটা কী?এই পদ্ধতিতে মানুষের দেহকোষে সার্স-কভ-২ ভাইরাসেরই জেনেটিক কোড পৌঁছে দেওয়া হবে। ফলে দেহকোষেই করোনার মতো স্পাইক প্রোটিন তৈরি হবে। ভাইরাল প্রোটিনের মতো সংক্রামক না হলেও দেহকোষে তৈরি এই স্পাইক প্রোটিনের কাজ হবে কোষকে জাগিয়ে তোলা।

অর্থাৎ বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে কোষে ভিনদেশী প্রোটিন বা অ্যান্টিজেন ঢুকেছে। তার মোকাবিলায় তখন দেহকোষ নিজেই অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে দেবে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ তৈরি হবে। ইম্পিরিয়াল কলেজের মিউকোসাল ইনফেকশন ও ইমিউনিটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রবিন শ্যাটন। তিনি বলেছেন, সেল্ফ অ্যাম্পলিফাইং আরএনএ টেকনোলজির কাজ হল শরীরের মধ্যেই ভাইরাসের প্রোটিনের অনুরূপ প্রোটিন তৈরি করা যাতে তার প্রতিরোধে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে।

এই প্রক্রিয়ায় খুব দ্রুত রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। মর্নিংসাইড সংস্থার সহ-কর্ণধার গেরাল্ড চ্যান বলেছেন, “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে বিশেষ উপায় কাজে লাগিয়ে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ইম্পিরিয়াল কলেজ। আমরা শুধু মানুষের শরীরে ট্রায়ালের রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছি। যে মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা সবুজ সঙ্কেত দেবেন ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি শুরু হয়ে যাবে। পৌঁছে দেওয়া হবে বিশ্বের নানা দেশে, বলেও তিনি জানান।

ইম্পিরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের ভ্যাকসিনের সঙ্গে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনেকটাই তফাৎ। অক্সফোর্ড কাজ করছে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন নিয়ে। এক্ষেত্রে শরীরে নিজে থেকে ভাইরাল প্রোটিন তৈরি হবে না বরং বাইরে থেকে দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় করা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরির চেষ্টা হবে। এই ভ্যাকসিনে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাডেনোভাইরাসকে। শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া অ্যাডেনোভাইরাসকে ল্যাবে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে যাতে মানুষের শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে।

এরপর, সার্স-কভ-২ ভাইরাসের কাঁটার মতো অংশ অর্থাৎ স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। এই ভাইরাল প্রোটিন আগে থেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা অ্যাডেনোভাইরাসের মধ্যে ঢুকিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। এখন ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করলে এই বাহক ভাইরাস অর্থাৎ অ্যাডেনোভাইরাস করোনার স্পাইক প্রোটিনগুলোকে সঙ্গে করে নিয়েই মানুষের শরীরে ঢুকবে। দেহকোষ তখন এই ভাইরাল প্রোটিনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। সেই সঙ্গে দেহকোষের টি-সেল (T-Cell) গুলোকে উদ্দীপিত করবে। শুরুতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের নাম ছিল ChAdOx1 nCoV-19। বর্তমানে এর নয়া ভার্সনের নাম হয়েছে AZD1222।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *