খেলার ছলে শিশুদের গণিত শিখায় ম্যাথস ক্লাব


শিশুদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে এবং গণিতের জাদু শিখাতে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জে গড়ে ওঠেছে ‘ম্যাথস ক্লাব’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শিশুদের খেলার ছলে ভীতি কাটিয়ে গণিতে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠান।

গণিতে যারা দুর্বল মূলত তাদের জন্যই এটি একটি ভিন্নধর্মী প্ল্যাটফর্ম। স্কুল এবং বাসার প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ের গতানুগতিক ধারার বাইরে শিশুদের বেসিক ধারণা তৈরি করে গণিতে ভালো ও দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে ম্যাথস ক্লাব।

ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা রহমান জোহান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমান যুগে বাচ্চাদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও এক ধরণের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন যে পড়ালেখায় ভালো করতে হবে। এর জন্য তাকে একাধিক হাউজ টিউটর বা কোচিংয়ে ভর্তি করান। এতে বাচ্চাটি সারাদিন স্কুল শেষ করেও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। আর স্কুলে ওইগুলোই পড়ানো হয় যা পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা বেশি। বাচ্চাদের বেসিক বা মূল বিষয়গুলোতে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আর গণিতে ভালো করার পূর্বশর্তই হচ্ছে বেসিক জানা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, একই ক্লাসে প্রায় ৪০-৪৫ জন বাচ্চা থাকলে সবার গ্রহণ করার ক্ষমতা সমান থাকে না। এডভান্স লেভেলের যারা তারা সহজেই নিতে পারে। আর যারা মিডিয়াম লেভেলের তারাও ক্লাস-প্রাইভেট পড়া মিলিয়ে মোটামোটি একটা মার্ক্স পায় গণিতে। কিন্তু তাদের থেকেও পিছিয়ে যারা তাদের জন্যই সমস্যাটা হয়।

”অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চারা সব বিষয়ে ভালো করছে কিন্তু কেবলমাত্র গণিতেই খারাপ করছে। অনেক বাচ্চা আছে গণিত করার কথা বললেই পালাতে চায় বা ফাঁকি দিয়ে বাঁচতে চায়।”

কিন্তু গণিত তো আর ভয় পাওয়ার জিনিস নয়। এই বাচ্চাদের ভয় পাওয়া দূর করতে তাদের প্রয়োজনে একদম প্রাথমিক পর্যায় থেকে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ শিখানো হয়, বলেন জোহান।

ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা জানান, ‘যখন দেখা যায় ক্লাস ফোর বা ফাইভের কোনো বাচ্চা তার ক্লাসে অংক করতে পারছে না তখন তাকে ক্লাস ফোরের অংক বোঝানো হয়, যদি দেখা যায় সে সেখানেও পারছে না তখন ক্লাস থ্রির গণিত শিখাই, আর তাতেও যদি সে আটকে যায় তাহলে ক্লাস টু বা ওয়ানের অংক শিখিয়ে ধীরে ধীরে তাকে তার ক্লাসের উপযোগী করে গড়ে তুলি আমরা।’

”আমরা বাচ্চাদের শিখাই শুধুমাত্র হাসি দিয়েই ম্যাথ বা গণিত সলভ করা যায়।”

যদি কেউ গণিতকে ভয় পায়, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না, সমাধান করতে সমস্যায় পড়ে, ঘাবড়ে যায়, বুঝতে সমস্যা হয়, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগে তাঁর জন্যই মূলত এই ম্যাথ ক্লাব।

ক্লাবের উদ্যোক্তারা জানান, গণিত বিষয়টাকে তারা শিশুদের সামনে একটা সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করেন সমস্যা হিসেবে নয়। সেই সাথে এটি শুধু বোঝারই বিষয়। একইসঙ্গে শিশুদের এই ধারণা দেওয়া হয় যে, কেউ যদি গণিতের সাথে প্রতিদিন দেখা-সাক্ষাৎ করে তাহলে এটি তার বন্ধু হয়ে যায়।

ম্যাথস ক্লাব মনে করে, পরীক্ষার ফলাফলের চেয়ে বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশটা বেশি জরুরী। আর গণিতের কাজই হচ্ছে জটিল জিনিসকে সহজ করে তোলা, সহজ জিনিসকে জটিল করে তোলা নয়।

একজন শিশুকে সপ্তাহে দুই দিন টানা দুই ঘণ্টা গণিত শেখানো হয় এ ক্লাবে। আর প্রতিটি ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬ জন। বর্তমানে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস সেভেনের শিক্ষার্থীদের এই ক্লাবে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে এই পরিসরটা এসএসসি, এইচএসসি লেভেল পর্যন্ত করার ইচ্ছা কর্তৃপক্ষের।

ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত বাচ্চাদের মাসিক ফিস ১৫০০ টাকা, ক্লাস ফোর থেকে ফাইভ পর্যন্ত বাচাদের ফিস ২০০০ টাকা এবং ক্লাস সিক্স ও সেভেনের বাচাদের ফিস ২৫০০ টাকা।

উদ্যোক্তা জানান, ম্যাথস ক্লাব বিশ্বাস করে প্রত্যেকটা শিশুই একেক রকমের ফুল, আর তারা প্রত্যেকে মিলেই এই পৃথিবীটাকে একটি সুন্দর বাগান হিসেবে গড়ে তোলে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *