বিগত কয়েকদিন যাবৎ মনটা ভাল নেই, নিকটজনের চলে যাওয়া, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে। পত্রিকায় লিখি তাই মাঝেমাঝে খবর নিতে বের হতে হয়। গত রোববার রাতে হ্যামট্রাম্যাকে একটি অনুষ্টান ছিল। আমি যখন অনুষ্টানস্থলে পৌঁছাই তখন প্রবাসের অনুষ্টানগুলোর মূল পর্ব অর্থাৎ বক্তৃতা চলছিল। কে একজন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। যেমন তার গলার আওয়াজ তেমনি তার ভাষার প্রয়োগ। দেখলাম লাল শার্টের উপর নীল টাই, রাত হলেও চোখে তার রোদ চশমা। আমার কৌতুহল বাড়তে থাকে আর আমি বক্তৃতারত লোকটির দিকে এগোতে থাকি। আমি যত আগাতে থাকি বক্তৃতার আওয়াজ তত কমতে থাকে। যখন আমি তার কাছাকাছি পৌঁছাই সে তড়িঘড়ি বক্তৃতা শেষ করে পিছন দিকে চলে যায়।
আমার শুধু মনে হলো দূর অতীতে কোথাও যেন তাকে দেখেছি। শুধু দেখা নয়, মনে হল তার কাছাকাছি ছিলাম। বসে অনুষ্টান দেখছিলাম আর অতীতের বন্ধুবান্ধবদের কথা ভাবছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই কালো চশমা পরা লোকটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে ঝাপটে ধরে বলছে দোস্ত কেমন আছিস। কোলাকোলির এক পর্যায়ে কানেকানে বললো দোস্ত বাইরে চল। কোন সিন ক্রিয়েট করিস না।
তার চোখে মুখে কি যেন একটা ভীতির ভাব। আমাকে প্রায় টেনে হিছড়ে বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে তখন কনকনে ঠান্ডা ও প্রচন্ড বাতাস। জিজ্ঞেস করলাম এখানে কেমন করে? এখন কি করিস? বললো, এইতো তোদের সেবা করতে চলে এলাম। আমিতো বাংলাদেশের একজন উদীয়মান ইন্ড্রাষ্টিলিষ্ট। জিজ্ঞাসা করলাম এতো সুন্দর বক্তৃতা শিখলি কোত্থেকে। বললো মনে নেই তুই যখন হরতালের দিনে ওলি গলি করতি তখন আমি ১৫ দল, ৭ দলের মিছিলে যেতাম। আমি বললাম, তাহলে তোর অতীতের কথা মনে আছে। সে বললো, তুই সারাজীবন অতীত নিয়েই পড়ে থাকলি, এজন্য তো তোর আর কিছু হলো না। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখ। আসলেই আমি একটু অতীতে ফিরলাম। আমার এই বন্ধুর নাম কইতর আলী। একসময় আমরা দুজনে সিলেট শহরে রিকশা চালাতাম। আমি সব সময় লম্বা খ্যাপ ধরতাম এই যেমন ধরেন বন্দর থেকে আম্বরখানা, জিন্দাবাজার থেকে মেডিকেল আর সে ছোট ছোট খ্যাপ মেরে দিন শেষে আমার চেয়ে বেশী রোজগার করতো।
আমাকে সে সব সময় বলতো শর্টকার্ট মার দোস্ত। শর্টকার্ট মেরে আমার দোস্ত আজ উন্নতির চরম শিখরে। আর আমি! এমন সময় আমার বন্ধুর ফোন বেজে ওঠলো। বন্ধু বললো, দোস্ত আমার আরেকটা মিটিং আছে যেতে হবে। আমাদের সামনে এসে দাড়ালো একটি রেইঞ্জ রোভার। বন্ধু বিদায় জানিয়ে গাড়ীতে উঠলো। হ্যামট্রাম্যাক সিটির “বাংলাদেশ এভিনিউ” ধরে গাড়ীটি এগোতে লাগলো। আমি আবার অতীতে ফিরলাম। যে বাংলাদেশ এভিনিউ’র ওপর দিয়ে আমার বন্ধুর গাড়ীটি এগিয়ে যাচ্ছে একসময় সে সড়কের নাম ছিল কনান্ট ষ্ট্রীট। বন্ধু হয়ত কোন দিনই জানবে না কনান্ট ষ্ট্রীটকে বাংলাদেশ এভিনিউ বানাতে অতীতে কত বাঙ্গালি যে কত পরিশ্রম করেছে। বন্ধু অতীত ভূলিস না। অতীতই যে গড়ে দেয় ভবিষ্যতের সাফল্যের সোপান।