‘বাংলা সংবাদ ডেস্কঃসুন্দর’ মানুষ আসলে কেমন। গত দুইদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। গায়ের রঙ বিবেচনায় কাউকে সুন্দর, অসুন্দর বলা নিয়ে পক্ষে, বিপক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে বিউটি এক্সপার্টরা মনে করেন, গায়ের রঙ কোনভাবেই সুন্দরের মাপকাঠি নয়। একজন মানুষের সৌন্দর্য্য ফুটে উঠে বাচনভঙ্গি ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে। মানুষ ভালো কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার গঠনের মাধ্যমে নিজেকে শোভন, সুন্দর আর পরিশীলিত করে অন্যের প্রীতিভাজন হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃত অর্থে এটাই হচ্ছে ‘সুন্দর’। এখানে গায়ের রঙ কোন বাধা বা সুবিধা নয়।
এই বিষয়টিই আরো প্রাণবন্ত করে উপস্থাপন করা হচ্ছে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’ প্রতিযোগিতার সেরা ২০ সুন্দরীর গ্রুমিং পর্বে। গত সোমবার রাজধানীর রেডিসন হোটেলে তাদের সাথে কথা বলে তেমনটিই মনে হয়েছে। হাজারখানেক প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে সেরা ২০-এ আসতে শ্যাম, কালো, ফর্সা রঙ কোন বাধা হয়নি তাদের। প্রতিযোগিরা বলেছেন, নিজেদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজের বঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু একটা করার প্রত্যাশা নিয়েই ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’ প্রতিযোগিতায় এসেছেন তারা।
পেশায় চিকিৎসক হয়েও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন আপনা চাকমা। তিনি বলেন, শিক্ষত আর মেধাবী মানুষরাও এখানে আসেন। আমি ওদেরকে দেখে অনুপ্রাণীত হয়েছি এখানে আসার জন্য। এই প্লাটফর্মটা আসলে অনেক বড়। এটা আমাকে অনেক ভালো কাজের সুযোগ করে দিবে। এমন নয় যে আমি অভিনয় করবো, মডেলিংই করবো বা মিডিয়া জগতে যাবো। আমি আসলে একজন ডাক্তার। আমার প্রফেশন নিয়ে অনেক বেশি প্রাউড। একজন মানুষ যখন অসুস্থ অবস্থায় আমার কাছে আসে এবং তাকে যখন সেবা দিয়ে সুস্থ করতে পারি, সেটা আমার কথা বার্তা দিয়ে হোক, আমার ওষুধ দেয়ার মাধ্যমে হোক। এরফলে যে মানসিক শান্তি আমি পাই। আমার মনে হয় না আর কোথাও থেকে এটা পাওয়া সম্ভব। আমি তাই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এক কথায় আমি মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত করতে চাই। তিনি এখন ধানমন্ডির লেব এইড স্পেশালাইজস হসপিটালে করোনা ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে কাজ করছেন।
পড়াশোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার স্কুল ছিল ইস্ট ওয়েষ্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ওখান থেকে হলিক্রস স্কুলে পড়েছি ক্লাস সিক্স পর্যন্ত। সেভেন থেকে আমি ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে পড়েছি। এসএসসি ও এইচএসসি দুইটাইতে আল্লার রহমতে কুমিল্লা বোর্ডে প্লেইস আছে। এরপর আর্ম ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ ঢাকা। ওখান থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর থেকেই আমি লেব এইড হসপিটালে কাজ করছি। ভবিষ্যতে আমি চর্ম বিশেষজ্ঞ হতে চাই। মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০ যদি আমি জিততে পারি। তবে দেশের জন্য কাজ করার পাশাপাশি আরো বড় ভাবে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ হবে।
ফারজানা আক্তার অ্যানি এসেছেন প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে। পড়াশোনা করছেন সিএসই ডিপার্টমেন্টে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে এসেছি আমার কোয়ালিটিস গুলা শো করে নতুন কিছু গুণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে। আমার কাছে মনে হয় এটা এমন একটি প্লাটর্ফম যেটা নিজেকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে ইমপ্রোভ করার সুযোগ তৈরী করে দিবে। ফরিদপুরের এই মেয়ে তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার থিয়েটারের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অ্যানির লক্ষ্য বড় অভিনেত্রী হওয়া। তিনি বলেন, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা আমার লক্ষ্য পূরণে অনেক বড় সহায়ক হবে। পড়াশোনার বাইরে ড্রয়িং এবং ভ্রমণ তার খুব ভালো লাগে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই ডিপার্টমেন্টে পড়ছেন মুনমুন রহমান। গাজীপুরের কাপাসিয়ার এই মেয়ে চার ভাই বোনের মধ্যে তিন নম্বর। তিনি বলেন, আমার ভালোলাগার কারণেই এখানে আসা। এবার যারা এখানে অংশ নিয়েছেন সবাই অনেক মেধাবী। এই মেধাবীদের সাথে মিলে মিশে কাজ করার আনন্দটাই আলাদা। গত বছরের চ্যাম্পিয়ান শিলা ম্যামকে আমার অনেক ভালো লাগে। তার পাড়াশোনার ব্যাকরাউন্ড আমাকে মুগ্ধ করেছে। নিজের প্রতি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আমিও সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোতে চাই।
বেশ চটপট স্বভাবের মেয়ে নিদ্রা দে নেহা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে রেসপেক্টেড একটা জায়গা মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। যেখানে মানুষের বাজ্যিক বা অভ্যান্তরীণ সৌন্দর্য্যটাকে মূল্যায়ন করা হয়। আমি দেখতে সুন্দর। এটা কিন্তু আমাদের সৌন্দর্য্য না। আমাদের অভ্যান্তরীণ একটা সৌন্দর্য্য আছে যেটা আমাদের টেলেন্ট। আমি চাচ্ছিলাম এমন একটা প্লাটফর্মে এসে পুরো বাংলাদেশকে আমাকে চেনাতে যে আমি কিছু করতে পারি। প্রথমত আমাকে আমার বাংলাদেশের কাছে প্রেজেন্ট করছি। তারপর আমার মাধ্যমে সারা দেশকে বিশ্বের কাছে প্রেজেন্ট করতে চাই। অন্যদের চেয়ে আপনি কোন জায়গাটায় আলাদা? আমি কনফিডেন্স। আমি যদি কখনো ভয় পাইও, কখনো বুঝতে দিই না। যদি কোন উত্তর আমি না পারি তবে কিন্তু চুপ থাকি না কিছু একটা বলে দেই। নিজের আইডল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। গত বারের চ্যাম্পিয়ার শিলা আপুও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিলেন। আপুর ভয়েসটা আমাকে খুব উৎসাহিত করেছে। বিশেষ করে গ্র্যান্ড ফিনালে তার কথা শোনে মনে হয়েছে তিনি কিছু একটা বলছে যা সব জায়গায় পৌঁছাছে।
২০১৯ সালে প্রথম আসরের পর সমগ্র বিশ্বজুড়ে করোনা কালিন পরিস্থিতির জন্য ২০২০ সালে মিস ইউনিভার্সের কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। নতুন সূচী অনুযায়ী গত ১১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ‘ফ্লোরা ব্যাংক মিস ইউনিভার্স ২০২০’ সালের বাংলাদেশ পর্বের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সেরা ২০ জন সুন্দরীর বাছাই শেষে তাদের গ্রুমিং চলছে।
চূড়ান্ত পর্বের বিচারকদের মাঝে এবার থাকছেন মডেল ও অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মীম। হসপিটালিটি পার্টনার রেডিসন হোটেল-এ চলাকালীন গ্রুমিং সেশনে প্রতিযোগীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গত সোমবার আসেন এই তারকা। সময় দেন সেরা ২০ সুন্দরীকে, বিশদ আলাপচারিতায় প্রকাশ পায় প্রতিযোগীদের নিয়ে তার আশা আর চিন্তাভাবনা। অনুপ্রেরণা যোগান প্রতিযোগীদের এবং উদ্বুদ্ধ করেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তাদের নানান প্রশ্নের উত্তর দেন। গ্রুমিং সেশনে মীম তার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিযোগীদের বেশ কিছু পরামর্শ দেন এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কৌশল শেখান। প্রিয় মডেল ও অভিনেত্রীর সাথে দেখা ও কথা বলার কারণে প্রতিযোগীদের মাঝে বেশ উৎসাহ ও উৎফুল্লতা দেখা যায়।
প্রতিযোগীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে গ্রুমিং সেশনে আরো যোগ দেন সাবেক মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০১৯, শিরিন আক্তার শিলা। একই প্ল্যাটফর্মের একই পেজেন্টের সাবেক বিজয়ীকে নিজেদের সাথে দেখে উচ্ছ্বসিত হন সেরা ২০। কেমন অভিজ্ঞতা ছিল শিলার, কিভাবে নিজেকে প্রতিযোগিতায় সেরা প্রমাণ করে মুকুট পান সেই গল্প শুনে সবার মাঝেই উচ্ছ্বাস, আনন্দ, উত্তেজনা ও আত্মবিশ্বাস যেন দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গেছে।
শিরিন আক্তার শিলা প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এ ধরনের একটি বিউটি পেজেন্টে অংশগ্রহণ একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। সবাইকে মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে যেকোনো অবস্থায় মানিয়ে চলার জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বিধিনিষেধ মেনে, মোবাইল ফোন-এর ব্যবহার কমিয়ে এনে নিজের প্রতি মনোযোগ দেয়ার সময় এখন।’
প্রাথমিক বিচারক হিসেবে প্রিয়তা ইফতেখার (মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০১৮) যাদের নির্বাচন করেন সেই টপ ২০ জন আরেকবার গাইড হিসেবে তাকে কাছে পান। প্রিয়তা ইফতেখার গ্রুমিং পর্বে প্রতিযোগীদের সাথে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেন। নিজেকে চর্চা করে নিজের মধ্যকার আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলার অনুশাসন দেন তিনি। ভবিষ্যতেও যারা এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চান তাদেরকে এখন থেকেই তৈরি হতে বলেন।
প্রতিষ্ঠিত তারকাদের সাথে কথা বলে, পরিচিত হয়ে এবং তাদের থেকে নানান বিষয়ে জানতে পেরে প্রতিযোগীরা আরো বেশি সুন্দরভাবে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে পারবে, পারদর্শী হতে পারবে বলে আশা করেন আয়োজকরা। তারা বলেন দৈনন্দিন প্রতিযোগীরা যেই প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এতে করে নতুন কিছু শিখতে পারার অনেক সুযোগ রয়েছে।
আগামী ২০ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ‘মিস ইউনিভার্স ২০২০’ প্রতিযোগীতার ৬৯তম মূলমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ‘ফ্লোরা ব্যাংক মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’-এর মুকুটবিজয়ী।
মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের প্রধান স্পন্সর ফ্লোরা ব্যাংক, সহযোগী স্পন্সর রেজুভা, সহযোগী পার্টনার আরটিভি, মেকওভার পার্টনার পারসোনা, পিআর পার্টনার নর্থব্রুক কনসালটেন্টস এবং হসপিটালিটি পার্টনার রেডিসন ব্লু ঢাকা।