চামচামি !!


বাঙলা অভিধানে চামচা শব্দ টি আদি কাল থেকে বিদ্যমান । যার অর্থ মোসাহেব , চাটুকার , তোষামোদকার , হীন স্তাবক , পা চাটা দালাল । (ইংরেজি তে যাকে বলে Yes Man , Underling , sycophant . ) এই শব্দটি র উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে ফরাসী” চমচহ ” শব্দ থেকে । পশ্চিমা বিশ্বে এই শব্দের উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এ সব দেশে চামচামি , চাটুকারিতা নাই বললেই চলে । ভারত বর্ষে রাজা অশোক , চন্দ্র গুপ্ত থেকে সুলতানী ও মোগল আমলে তার ভয়াবহ রূপ ধারণ করে । নবাব সিরাজউদ্দৌলা র পরাজয়ের অনেক কারনের মধ্যে একটি চামচামি । ব্রিটিশ রা ভারত বর্ষে আসার পর চামচামি , চাটুকারিতা ও মোসাহেবি করার জন্য একটি বিশেষ শ্রেণীর সৃষ্টি করেছিল । যাদের কে তারা বিভিন্ন উপাধিতে ও ভূষিত করেছিল । ক্ষেত্র বিশেষে উপঠোকন ও সার্টিফিকেট প্রদান করত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায় , যারা খাজনা আদায় , চৌহদ্দি রক্ষনাবেক্ষণ , গোপন সংবাদের আদান প্রদান , বিদ্রোহী প্রজাদের শায়েস্তা করার জন্যে ঐ চামচাদের নানা উপাধি প্রদান করত । আমদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখনীতে তুলে ধরেছেন ।
সাহেব কহেন , চমৎকার ! সে চমৎকার ! মোসাহেব বলে , চমৎকার সে হতেই হবে যে ! হুজুরের মতে আমার অমত কার ? সাহেব কহেন , কি বলছিলাম , গোলমালে গেলো গোলায়ে , মোসাহেব বলে , হুজুরের মাথা গুলাতে ই হবে দিব কি হস্ত বুলিয়ে । যে কারণে আমাদের রক্ত মাংসে চামচামি র ধারাবাহিকতা অব্যাহত । বাংলাদেশে চামচামি চাটুকারিতা করে আয় রোজগার , পদোন্নতি , রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ ইত্যাদি সম্ভব । কিন্তু এই আমেরিকা য় ও চামচামি !! আজ ১০ নভেম্বর রোববার চামচামি, চাটুকারিতার বিষয় টি মাথায় এলো ।
পূর্ব নির্ধারিত সময়ানুযায়ী আমার এলাকার এক বড়ভাই য়ের সাথে দেখা করতে Hamtramck City তে এসেছিলাম । কিন্তু দূর্ভাগ্য জনক ভাবে উনার সাথে দেখা হয়নি । Hamtramck হচ্ছে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশীদের তীর্থ স্থান । বেশীরভাগ মানুষই এখানে বসবাস করেন । সঙ্গত কারণেই তাদের চাহিদা পূরণে এখানে গড়ে উঠেছে মুদি দোকান , ডাক্তার খানা , ফার্মেসি , ল চেম্বার , গাড়ি মেরামতের দোকান , রেষ্টুরেন্ট , মসজিদ, মন্দির , প্যাগোডা ইত্যাদি । মৃত প্রায় Conant street জেগে উঠেছে বাংলাদেশীদের পদচারণায় । বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের চাপে বেশ কয়েকটি নতুন চার্টার স্কুল ও স্থাপিত হয়েছে । হয়েছে অনেক মসজিদ ও মাদ্রাসা । শুধু মাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ।
প্রয়োজনের তাগিদেই অনেক কিছু গড়ে উঠেছে । আমার সাধারণত রোববার কাজ থাকায় Hamtramck যাওয়া পড়ে না । গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য । কোন রেষ্টুরেন্টে ই নিরিবিলি পরিবেশ নেই । আমি দুটো তে ঢুকে দেখলাম আমাদের কমিউনিটি র বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার , ডঃ , ডাক্তার , বড়ো মাপের রাজনৈতিক ও সামাজিক ও ব্যবসায়িক নেতা দের । তারা যদিও আমাকে চিনেন না আমি মোটামুটি উনাদের অনেক কেই চিনি । সবাই অনেক উচ্চ শিক্ষিত , জ্ঞানী , মহৎ , কমিউনিটি র কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ ।
কমিউনিটি র কল্যাণে উনারা নিজেদের পকেটে র টাকা খরচ করে , পরিবার কে সময় না দিয়ে কমিউনিটি কে সময় দিচ্ছেন । শুধু তাই নয় , অনেক নেতারা ই এখন অনেক দূরে থাকেন । কমিউনিটি র প্রতি তাদের প্রচন্ড ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকার কারণে ই Hamtramck চলে আসেন । যা Hamtramck এ বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্য অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার । আমার মতো অশিক্ষিত , অর্ধ শিক্ষিত অড জব করা লোক দের জন্য তাদের এই পরিশ্রম সত্যি প্রশংসা র যোগ্য । আমার লেখা র শুরু তেই লিখেছিলাম ইংরেজ রা স্থানীয় লোকজনের মধ্যে থেকেই এজেন্ট বা (চামচা )নিয়োগ দিতো ।
তার আবার স্তর বিন্যাস ও ছিল । তৃনমূল থেকে বড়লাট পর্যন্ত । উঁচু স্তরের এজেন্ট রা বড় কর্তাদের সঙ্গে আর নিচু স্তরের এজেন্ট তৃনমূলের সাথে । এই প্রক্রিয়া এখানে ও বিদ্যমান । স্বনামধন্য লেখক ও বুদ্ধি জীবি আবুল মাকসুদ এর মতে , আগে চামচামি, চাটুকারিতা শুধু সরাসরি ছিল। এখন ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞাপন , লেখা লেখি , পোস্টার , ব্যানারে ও চামচামি র জয় জয়কার ” । Hamtramck এ বসবাসরত বাংলাদেশীদের জীবন মান উন্নয়নে র জন্য এই চিন্তা শীল সুহৃদ রা প্রতিযোগিতা মুলক ভাবে দুটি গ্রুপে কাজ করেন ।
যাদের একটি রাজনৈতিক ও অন্যটি অরাজনৈতিক লেবাসে । উভয়ের সঙগঠনে র ই আবার স্থানীয় প্রতিনিধি আছেন । এই প্রতিনিধি রা ও জ্ঞানী এবং চৌকস ব্যাক্তিত্ব । যে কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য উনাদের শ্রম , মেধা , সময় ও অর্থের অপচয় সে কমিউনিটি র সাধারণ মানুষের সাথে তাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা কেমন ? যাদের হাঁড় ভাঙা খাটুনি তে ও taxes এর পয়সা য় Hamtramck City ইমারজেন্সি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে । যাদের প্রজন্ম হার্ভার্ড , ইয়েল , কলাম্বিয়া , ব্রাউন , জনহপকিনস এ লেখা পড়ে কমিউনিটি কে আমেরিকান মুল ধারায় অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে । ডাঃ , ইন্জিনিয়ার , নার্স , ব্যবসায়ীসহ আজ নাসায় কর্মরত তাদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ কেমন ? এসব ও কি আপনাদের অবদান ? কারণ একদল বলে বাংলা ব্যালট এনেছি ? তাহলে আরবি ব্যালট আনলো কে ? আরেক দল বলে প্রশাসনের সাথে লিয়াজো টা আমরাই করি ।
আরে ভাই জান , জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেক কাজ আমেরিকান সিস্টেম এ এমনি হয়ে যায় । সব চেয়ে মজার ব্যাপার হলো উভয় পক্ষের স্থানীয় এজেন্ট রা এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের প্রতিযোগিতায় মত্ত । ইতিপূর্বে বাংলা টাউন সাইনবোর্ড টাঙানো নিয়ে কিনা হয়েছে ? আপনারা যারা কমিউনিটি র কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ , সত্যি কার অর্থে ই উন্নয়ন অগ্রগতি চান , তাহলে কমিউনিটি র প্রয়োজনীয় তা জানুন ? আপনারা ই এদেশে প্রথম জেনারেশন । আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে এদেশে সামাজিক , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক শক্ত ভিত্তি দাঁড় করানো র দায়িত্ব আমাদের ই। যদিও কিছু সংখ্যক মানুষ আপন চেষ্টা য় প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু তা খুব ই নগন্য । আপনারা যারা উপশহরে থাকেন , আপনাদের বাচ্চা রা ভালো স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।  আপনাদের রেফারেন্স এ ভালো কাজ পায় । আপনাদের সাথে সিনেটর , গভর্নর , মেয়রের দহরম মহরম সম্পর্ক ।
সুযোগ সুবিধা আদায় আপনাদের নখদর্পণে । আমরা যারা Hamtramck থাকি আমাদের বাচ্চাদের জন্য ভালো স্কুল , কলেজ নেই ।যে কারনে প্রতিযোগিতা মুলক পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত । যে কারণে কষ্ট করে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করার পরও কাঙিত চাকরি পায়না । আমাদের আয় রোজগার ও কম । আপনাদের রাজনীতি র জন্য আমাদের মতো ইনোসেন্ট মানুষ কে সুকৌশলে ব্যবহার করেন । অপ্রিয় হলেও সত্য যে আপনারা যখন উপশহরে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি করেন , তখন Hamtramckএর কয়জন সাধারণ মানুষকে আমন্ত্রণ জানান ? অবশ্যই আপনাদের উভয় পক্ষের নির্ধারিত এজেন্ট এর কথা আলাদা । আমার তো মনে হয় অনেক এজেন্ট ও সে দাওয়াত পায়না ।
আর ভাগ্য চক্রে কোন এজেন্ট দাওয়াত পেলে সেও নিজেকে সুপিরিয়র ভাবতে শুরু করে । এমনি এক এজেন্ট ( দালাল ) এর কথা আরেক দিন লিখবো । ইচ্ছা য় হোক , অনিচ্ছায় হোক অথবা প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ই হোক একটি দেয়াল সৃষ্টি হয়ে গেছে বা আছে । আপনি , আমি মানি বা না মানি এটাই বাস্তবতা । এজেন্ট বেষ্টিত হয়ে আপনি ও এজেন্ট উভয়ে আত্ব তৃপ্তি পেতে পারেন । অথবা কমিউনিটি র লোক জন দেখিয়ে মূল ধারার নেতা দের আত্ব তুষ্টি করাতে পারেন । এতে করে আপনার অথবা কমিউনিটি র দীর্ঘ মেয়াদী কোন কল্যাণ হবে না ।
দয়া করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে গিনিপিগ এ পরিনত করবেন না । আমরা বাংলা অনুবাদের জন্য , মেডিকেল কার্ডের জন্য , জরুরি খাদ্য , বাসস্থান, শিক্ষা খরচ ও চাকরি বিহীন ভাতার জন্য আপনাদের বিরক্ত করিনা । ফেডারেল ও রাজ্য সরকার আমাদের সে সুযোগ ও সুবিধা দিয়ে রাখছে । গাড়ি তে উঠার সময় একজন জন প্রতিনিধি র সাথে রোববার ই দেখা । বললাম ভাই এবার তো আপনারা কমিউনিটি র কল্যাণে অনেক কাজ করবেন বলে মনে হয় । উনি আমাকে যা বললেন তা লিখতে পারলাম না । উনি যদি লজ্জা পান অথবা অস্বীকার করেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *