চীনে ভয়ঙ্কর প্লেগের হানা, নতুন সতর্কতা জারি


চীনের অভ্যন্তরে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল মঙ্গোলিয়ার এক শহরে বুবোনিক প্লেগে আক্রান্ত এক রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ সতর্কতা বাড়িয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদনে জানা গেছে, বায়ানুর শহরের ওই আক্রান্ত ব্যক্তি একজন পশুপালক। তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা দ্বিতীয় সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুঁজছেন।

বুবোনিক প্লেগ নামের এই রোগটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এই রোগটি প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। আর এতে মৃত্যু হার প্রায় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। রোগটি এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে এর চিকিৎসা রয়েছে।

গত শনিবার বায়ানুর শহরের উরাদ মিডল ব্যানানারের এক হাসপাতালে বুবোনিক প্লেগে আক্রান্ত প্রথম সন্দেহভাজন ব্যক্তির শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। কীভাবে বা কেন তিনি সংক্রামিত হয়েছেন তা এখনো পরিষ্কার নয়।

দ্বিতীয় সন্দেহভাজন ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। ছেলেটি সম্ভবত কুকুরের কামড় খাওয়া এক কাঠবিড়ালি জাতীয় মারমোট প্রাণীর সংস্পর্শে এসেছিল। গ্লোবাল টাইমস এক টুইট বার্তায় এমনটি জানিয়েছে।

চীনে তিন স্তরের সতর্কতা হিসেবে প্লেগ বহন করতে পারে এমন সব প্রাণী শিকার ও খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সন্দেহজনক কিছু দেখলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য জনসাধারণকে আহ্বান করা হয়েছে। এই বছরের শেষ অবধি এই পদক্ষেপগুলো মেনে চলতে হবে।

বুবোনিক প্লেগ কি?
এটি মূলত ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট একটি রোগ। বুবোনিক প্লেগ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারির জন্য দায়ী ছিল। যা ব্ল্যাক ডেথ নামে খ্যাত। এই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ শতকে আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপ জুড়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

এটি থেকে কয়েক দিনেই বড় আকারের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ১৬৬৫ সালে এই মহামারিতে লন্ডনের জনসংখ্যার প্রায় পঞ্চমাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। চীন ও ভারতে ১৯ শতকে বুলবোনিক প্লেগে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।

তবে বর্তমানে এন্টিবায়োটিক দ্বারা এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে। বুবোনিক প্লেগের লক্ষণ হলো উচ্চ জ্বর, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, ঘাড়ে ও কুচকিতে লিম্ফ ফুলে যাওয়া।

এটা কি নতুন মহামারী?
এধরণের প্লেগ এখন খুবই কম দেখা যায়। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু সুযোগ থেকেই যায়। ২০১৭ সালে মাদাগাস্কারে ৩০০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। মেডিক্যাল পত্রিকা ল্যান্সেটের মতে তখন ৩০ জনের মতো মানুষ এই রোগে মারা যায়।

গত বছরের মে মাসে চীনের প্রতিবেশি দেশ মঙ্গোলিয়ায় দুইজন এরোগে মারা যায়। তারা মারমোট নামক প্রাণীর কাঁচা মাংস খেয়েছিল বলে জানা গেছে। যেটা এবারের দ্বিতীয় সন্দেহভাজন রোগীর ক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে।

তবে, এর ফলে মহামারী হওয়ার সম্ভাবনা কম।

স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ারের সংক্রামক রোগ বিষেশজ্ঞ ডাঃ শান্তি কাপাগোদা হিথলাইন নিউজ কে বলেন, এটা ১৪ শতকের মতো নয়, আমরা এখন জানি এই রোগটি কীভাবে সংক্রামিত হয়। আমরা এর প্রতিরোধের উপায়ও জানি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *