জান্নাতি হত্যায় অভিযুক্ত শ্বশুর-শাশুড়িসহ গ্রেফতার ৪


নরসিংদীতে মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় স্কুলছাত্রী জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শান্তি বেগম ওরফে ফেনসি রানি ও তার ছেলে শিপলু মিয়াসহ চারজনকে নাটোর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

মঙ্গলবার রাতে নাটোরের পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), ছেলে শিপলু ওরফে শিবু (২৩), মেয়ে ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। তারা সবাই চরহাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।

সদর থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলার পর থেকেই মামলার তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হয়। তাদের গ্রেফতার করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অপরাধীরা খুবই চতুর। এক স্থানে বেশিক্ষণ অবস্থান করেনি। তাই তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তার পরও আমরা সফল হয়েছি।

আজ বুধবার পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন (বিপিএম) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।

জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের (১৬) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন।

বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে। স্ত্রী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ী শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। যৌতুকের টাকা না দেয়াসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় তার ওপর নির্যাতন চলে।

চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ও শাশুড়ি শান্তি বেগম ও তার মেয়ে ফাল্গুনী বেগম এবং স্বামী শিপলু জান্নাতির শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি।

পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান আদালতে মামলা করেন।

আদালত পুলিশ ব্যুরো-অব-ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু পৌনে দুই মাসেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পিবিআই। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থেকে তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে জান্নাতিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শাশুড়ি শান্তি বেগম, স্বামী শিপলু ওরফে শিবু, ফাল্গুনী বেগম ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়াকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা শরীফুল ইসলাম খান।

এর পরই গ্রেফতার অভিযানে নামে সদর থানা পুলিশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে নাটোর থেকে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।