জিপিএ-৫ পেল ভ্যানচালকের ছেলে, ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন বাবা


আরাফাত হোসেন। ভ্যানচালকের ছেলে। ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন, লেখাপড়া করে ছেলে চিকিৎসক হয়ে গরিব ও দুস্থ মানুষের সাহায্যে কাজ করবে। বাবার স্বপ্ন পূরণে ছেলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে দারিদ্র্যের কাছে হার মানেনি আরাফাত। যশোরের শার্শা উপজেলার বড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। সবার সহযোগিতা পেলে আরাফাত বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া সুলতানা বলেন, সবার সহযোগিতায় কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আরাফাত। আরাফাতের ফলাফলে আমরা গর্বিত। তার বাবা ভ্যানচালক। বাবার আয়ে চলে ১০ সদস্যের পরিবার।

আরাফাত যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের ভ্যানচালক লিটন হোসেন টিটুলের ছেলে। ভিটেমাটি পাঁচ শতক জমিতে লিটন হোসেন টিটুলের পরিবারের বসবাস। আবাদ করার মতো কোনো জমি না থাকায় সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা বাবার পক্ষে কষ্টসাধ্য।

আরাফাতের ছোট ভাই রনি বড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আরাফাতসহ তার ছোট ভাই ও ফুফাতো বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বাবাকে ভ্যান চালানোর পাশাপাশি ধারদেনা করতে হয়। আরাফাতের বাবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে।

আরাফাতের বাবা লিটন হোসেন টিটুল বলেন, দিন দিন দ্রব্যমূল্যের দাম যেভাবে বাড়ছে কীভাবে সংসার চালাব আর কীভাবে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাব- তা ভেবে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি। ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু ভ্যান চালিয়ে যে আয় হয় ভবিষ্যতে তার পড়ালেখা নিয়ে খুব চিন্তা ও ভয় তাড়া করে আমাকে। নেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরিধেয় পোশাক। জানি না ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারব কিনা, আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা।

উলাশী টিআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৬২ সালে আমাদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৪৯১ জন ছাত্র-ছাত্রীতে মুখরিত বিদ্যালয়। নতুন বছরের প্রথম দিন ভর্তি হয়েছে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। যার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির (খ) বিভাগে সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয়েছে মেধাবী ছাত্র আরাফাত। তার বাবা একজন ভ্যানচালক। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন। প্রতিষ্ঠানের কোনো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না আরাফাত। লেখাপড়ার জন্য তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে আমাদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি বিত্তবানসহ সবার সহযোগিতা পেলে আরাফাতের স্বপ্ন পূরণ হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *