মাহবুব আলম ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সারাদিন অফিস শেষে সন্ধ্যায় আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে উঠলেন জামালপুরের উদ্দেশ্যে। অফিসে সারাদিনের ধকল থেকে একটু আরাম পেতে প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটেছেন। নির্দিষ্ট কোচে উঠে শরীরটা এলিয়ে দিলেন সিটে। কিন্তু কপালে বিশ্রাম থাকলে তো? সন্ধ্যার ট্রেনটিতে তখন একের পর এক ভিক্ষুক আর হকার উঠতে শুরু করেছে। শোভন শ্রেণি কিংবা প্রথম শ্রেণি- সর্বত্রই তাদের অবাধ যাতায়াত। তাদের কল্যাণেই মাহবুব আলমের আরামের যাত্রা দ্রতই হারাম হয়ে উঠল।
এসব ভিক্ষুকরা প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে বিদঘুটে সব আওয়াজ করে যাত্রীদের মনযোগ আকর্ষণ করেন। কেউ আবার গানও করেন। কোনো যাত্রী ঘুমিয়ে থাকলেও নিস্তার নেই। রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে কিংবা খোঁচা দিয়ে জাগিয়ে তুলে তাদের কাছে ভিক্ষা চাওয়া হয়। বিরক্তি প্রকাশ করলে কিংবা টাকা না দিলে পাল্টা আজেবাজে কথা বলে চলে যায় ভিক্ষুক। নিজের সম্মান বাঁচাতে যাত্রীর অবস্থা তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’। ট্রেনের এটেন্ডেন্টরা কখনই এসব দেখে না। তারা তখন টাকার বিনিময়ে অবৈধ যাত্রী তুলতে ব্যস্ত।
দেশের প্রায় সব রুটের ট্রেনগুলোতে ভিক্ষুকের উপদ্রব দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ঢাকা-ময়মনসিংহ-জামালপুর, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটগুলোতে। শুধু ভিক্ষুকই নয়, আরও বড় উপদ্রবের নাম হিজরা। দলবেধে তারা ট্রেনে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে। কমপক্ষে ১০ টাকা তাদেরকে দিতেই হবে। কেউ প্রতিবাদ করলেই হাতে তালি দিয়ে অশ্লীল গালাগাল আর অঙ্গভঙ্গি শুরু করে হিজরার দল। যাত্রীরা একপ্রাকার বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রেও কোনো এটেন্ডেন্টকে ডাকলেও খুঁজে পাওয়া যায় না।
বছরের পর বছর এভাবেই আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে চলছে ভিক্ষুক আর হিজরাদের রাজত্ব। এসব ক্ষেত্রে ট্রেনের এটেন্ডেন্টরা নীরব থাকে, কারণ টাকার ভাগ তারাও পায়। অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। ট্রেনে উঠলেই যেন টাকা দিতে সবাই বাধ্য। এসব ভিক্ষুক আর হিজরাদের পুনর্বাসন কিংবা অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদান এখন সময়ের দাবি। শাস্তি দেওয়া উচিত রেলের অসাধু কর্মচারীদের। সরকারের উদ্যোগে দেশের রেল যখন এগিয়ে যাচ্ছে, যাত্রীসেবা তখনও শূন্যের কোটায়। ‘সর্ষের ভেতর ভুত’ থাকলে সেটাও এখন দূর করা দরকার।