ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ গমন


দেশে কর্মসংকটের কারণে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক কর্মী নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলের জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।

সরকারিভাবে বারবার সতর্ক করার পরও কাজের ধরনসহ বিস্তারিত তথ্য না জেনে দালালের ফাঁদে পা দেয় অনেক তরুণ। কেউ কেউ সাগরপথে নৌকার মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে মৃত্যুবরণ করে। অনেক ভাগ্যবান তরুণ সাগর পাড়ি দিতে সক্ষম হলেও গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাদের জিম্মি করে দালালরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে।

দালালদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে না পারলে তারা কতটা নৃশংস হতে পারে- বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর তা স্পষ্ট হয়েছে। মানব পাচারকারী চক্রের নৃশংস আচরণের খবর প্রচারের পরও কেন অনেকে দালালদের কথা বিশ্বাস করে, এটা এক প্রশ্ন। অবশ্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকেরই গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য জানার সুযোগ হয় না।

মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে আটকে পড়া ৬৪ বাংলাদেশি দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তারা একটি নৌকায় তিউনিসিয়ার জলসীমায় আটকে রয়েছেন। লিবিয়া থেকে তারা ইউরোপের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।

মাঝপথে তাদের নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা তিউনিসিয়া উপকূলে আটকা পড়েন। ইউরোপে পাড়ি দিতে লিবিয়া ছাড়ার পর ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেড় শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা বিদেশে যেতে চান, তাদের সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

একই দিনের যুগান্তরে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লিবিয়ায় পাচার চক্রের হাতে জিম্মি রয়েছেন রাজশাহীর চার যুবক। বস্তুত এ ধরনের খবর বারবার পত্রিকার শিরোনাম হলেও বিদেশে গমনেচ্ছু ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে।

বিদেশে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র ওই যুবকদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছে। এরপর লিবিয়ার একটি শহরের এক নির্জন বাড়িতে তাদের আটকে রেখে আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে।

বস্তুত এ ধরনের প্রতারণার খবর বহুল আলোচিত। লক্ষ করা যায়, প্রায় একই কায়দায় দালালরা বিদেশে গমনেচ্ছুদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এ অবস্থায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে গমনের সুযোগ বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

দালালরা বিভিন্ন কায়দায় প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব দালাল প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *