টম অ্যান্ড জেরি যেভাবে তৈরি হলো


টম অ্যান্ড জেরিকে বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে পরিচিত ডুয়েটের একটি হিসেবে ধরা হয়। ইঁদুর-বিড়াল যুগলের এ কাহিনি নির্মাণের চিন্তাটি আসে, যখন নির্মাতা বিল হ্যান্না ও জো বারবেরা একেবারে খাদের কিনারায় ছিলেন। তারা কাজ করতেন প্রযোজক সংস্থা এমজিএম’র অ্যানিমেশন বিভাগে।

জানা যায়, দু’জনেরই বয়স তখন ত্রিশের নিচে। তারা অনেকটা বিরক্ত হয়েই ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করতে থাকেন। তখন বারবেরা প্রস্তাব করেন ইঁদুর ও বিড়ালের প্রতিদিনের খুনসুঁটির কাহিনি নিয়ে অ্যানিমেশন তৈরি করার। যদিও এর আগে অনেকবার এ পটভূমিতে কার্টুন তৈরি হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৪০ সালে তারা প্রথমবার প্রকাশ করেন ‘পুস গেটস দ্য বুটস’। প্রথম ছবিটিই সফলতা পায়। নির্মাতা স্টুডিও সেরা অ্যানিমেটেড শর্টফিল্ম বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পায়। কিন্তু যারা তৈরি করেছিল, তাদের কোনো কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি।

প্রথম পর্বে ইঁদুর ও বিড়ালের নাম ছিল ‘জ্যাসপার’ ও ‘জিঙ্কস’। পরে তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘টম’ ও ‘জেরি’। কার্টুনের চরিত্রদের সব কার্যকলাপ ফুটিয়ে তোলে স্কট ব্র্যাডলির আবহ সংগীত। টমের মানুষের মত চিৎকারের কণ্ঠ দেন হ্যান্না।

পরের দুই দশকে প্রায় ১০০টি ছোট পরিসরের কার্টুন তৈরির পেছনে ছিলেন হ্যান্না ও বারবেরা। প্রতিটি পর্ব তৈরি করতে কয়েক সপ্তাহ লাগতো এবং প্রায় ৫০ হাজার ডলার খরচ হতো। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে বিখ্যাত এই কার্টুন। তোপের মুখে পড়েন কখনো কখনো।

আপাত দৃষ্টিতে সহিংস কিছু কাহিনির চিত্রায়ন ও ইঙ্গিতপূর্ণ হাস্যরসাত্মক দৃশ্যপট থাকলেও বিশ্বজুড়ে এখনো দারুণ জনপ্রিয় টম অ্যান্ড জেরি। নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আশি বছরে পা রেখেছে বহুল পরিচিত এ কাহিনি। যা নিয়ে গীতিনাট্যভিত্তিক একটি চলচ্চিত্রও তৈরি করা হয়। ওই ছবিতে চরিত্রগুলো গান গাইতো এবং কথাও বলতো।

নির্মাতা বিল হ্যান্না মারা যান ২০০১ সালে। জো বারবেরার মারা যান ২০০৬ সালে। মারা যাওয়ার এক বছর আগে জো বারবেরা শেষবারের মতো টম অ্যান্ড জেরির একটি পর্ব তৈরি করেছিলেন। যেটি ছিল সঙ্গী বিল হ্যান্নাকে ছাড়া তার তৈরি করা টম অ্যান্ড জেরির প্রথম পর্ব।

 

টম অ্যান্ড জেরির বর্তমান স্বত্ত্বাধিকারী ওয়ার্নার ব্রাদার্স এ বছরের বড়দিনের আগে নতুন একটি লাইভ-অ্যাকশন ফিল্ম বাজারে ছাড়বে। তাতে ক্লো গ্রেস মোরেৎজ ও কেন জেওং কাজ করবেন। এছাড়া এ সম্পর্কে বিশেষ আর কিছু জানা যায়নি।

টম অ্যান্ড জেরি এখনো শিশুদের কাছে জনপ্রিয়। হ্যান্না ও বারবেরার এই অমর কীর্তি শিশুদের আজীবন আনন্দ দিয়ে যাবে। শত-সহস্র বছর পেরিয়ে যাবে এর আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *