যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপ শুরু হচ্ছে সোমবার সকালে (যুক্তরাষ্ট্র সময়) আইওয়া ককাস শুরুর মাধ্যমে। ডেমোক্র্যাট ভোটাররা হোয়াইট হাউসে তাদের মনোনীত প্রার্থী বাছাই এর জন্য ভোট দেবেন। ভোট হবে রিপাবলিকান প্রার্থী বাছাইয়েরও। যদিও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল থেকে ট্রাম্প মনোনয়ন পাবেন বলেই ধারণা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটের ১১ জন প্রার্থী। অবশ্য ‘আইওয়া’তে জিতলেই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন পাবেন কেউ, এমন নিশ্চয়তাও নেই।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা আইওয়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারি ভোট সব সময় আইওয়া থেকেই শুরু হয়। জুনের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চলবে এই প্রাইমারি। আগামী মঙ্গলবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় প্রাইমারি।
একজনের দিকে চোখ থাকবে সবার
এখন পর্যন্ত পাওয়া জরিপে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, আইওয়াতে ‘বামপন্থী’ হিসেবে পরিচিত ডেমোক্র্যাট মনোনয়ন প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তা বহাল থাকবে এবং রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম সবার চোখ থাকবে তার দিকেই। তবে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রয়েছেন জনপ্রিয়তার বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে।
তিনি আরও একজন সিনেটর, যারা প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন। কিন্তু সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের জন্য ওয়াশিংটনে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু তার সমর্থকেরা আইওয়াতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। গতবার হিলারির কাছে হেরে যাওয়া ৭৮ বছর বয়সী স্যান্ডার্সের এবারের প্রস্তুতি বেশ ভালো।
বার্নি স্যান্ডার্স এবারের নির্বাচনের জন্য বড়সড় তহবিল পেয়েছেন। তার প্রচারণার জন্য শতাধিক কর্মীর একটি দল রয়েছে। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পেলে, মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা কি নিজেকে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট দাবি করা একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে নামবেন কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে।
এলিজাবেথ ওয়ারেন, অ্যামি ক্লোবাশার এবং পিট বুডিজেজের মত হেভিওয়েট অপর প্রার্থীরা অবশ্য আশায় আছেন, মনোনয়নের জন্য স্যান্ডার্স প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবেন না। এদিকে রিপাবলিকান ককাসও একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, এবং ট্রাম্পের বিপক্ষে দলটিতে মাত্র দুজন প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু দলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এমনই যে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রার্থিতা ঘোষণা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
একটি যোগসূত্রের নাম
২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটদের কী ভুল হয়েছিল, তার একটি ধারণা সম্ভবত এই আইওয়াতেই পাওয়া যাবে। সর্বশেষ নির্বাচনে দুইশর বেশি মার্কিন কাউন্টি অর্থাৎ দেশটির প্রাদেশিক শহর যারা সে সময়কার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল, এর মধ্যে ৩১ টি কাউন্টি আইওয়াতেই।
এরা সবাই ২০১২ সালে মি. ওবামাকে সমর্থন দিয়েছিল। ডেমেক্র্যাটরা আশা করছে, সেসব ভাসমান ভোট আবার তারা নিজেদের পক্ষে আনতে পারবেন। নভেম্বরের আগে সেটা কেউই হয়তো জানতে পারবে না, কিন্তু আজকের প্রাইমারিতে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
মূল প্রশ্ন
আইওয়া কি প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর নির্ভর করে আপনি কিভাবে বিষয়টাকে বিবেচনা করে তার ওপর। যেহেতু এখন নির্বাচনের প্রাইমারি শুরু হয়ে যাচ্ছে, বলা যায় ভোটারদের মনোভাব নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে আইওয়া। যে কারণে এখানে জয় পেলে আশা করা যায় প্রার্থী সামনের দিনে প্রচারণায় চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।
যেমন ১৯৭৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এখানে জয়ের পরই তুমুল প্রচারণা শুরু করেন এবং নির্বাচনে জয়ী হন। আইওয়াতে জয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা বেশিরভাগ সময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন এমন একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। তবে রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রে তা সঠিক নয়।
২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আইওয়াতে জিতেছেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন এমনটা হয়নি। তবে, সামনের কয়েক মাসে আমরা দেখতে পাবো নির্বাচনে কে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে নামেন।
প্রাইমারি আসলে কী
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এই ‘প্রাইমারি’ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই- সুতরাং পুরো ব্যাপারটি নির্ধারিত হয় দল এবং অঙ্গরাজ্য আইন অনুযায়ী। যেভাবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ঠিক সেভাবেই, তবে দল নয় বরং অঙ্গরাজ্য সরকার প্রাইমারি নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে।
অঙ্গরাজ্য আইনে নির্ধারিত হয় যে, এই প্রাইমারি রুদ্ধদ্বার কক্ষে হবে কিনা অর্থাৎ যারা শুধুমাত্র দলের রেজিস্টার্ড বা তালিকাভুক্ত, তারাই ভোট দিতে পারবেন, নাকি উন্মুক্ত হবে অর্থাৎ যেখানে যেকোনো ভোটার ভোট দিতে পারবেন।
একজন প্রার্থী যদি প্রাইমারিতে বিজয়ী হন, তারা তখন স্টেটের সব প্রতিনিধির বা আংশিক প্রতিনিধিকে জয় করবেন, যা নির্ভর করে দলের আইনের ওপর। এই প্রতিনিধিরা দলের চূড়ান্ত সম্মেলনে তার পক্ষে ভোট দেবেন। এরপরে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা