গত বছরের ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের কনসার্ট। কিন্তু ১২ এপ্রিল রাতেই ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী কনসার্টের ইভেন্ট ম্যানেজারকে চাঁদা দেয়ার জন্য চাপ দেয়। চাঁদা না পেয়ে কনসার্টস্থলে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় তারা। হামলাকারী ছাত্রলীগের বেশিরভাগ নেতাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
বৈশাখের ঘটনার এক বছর পেরোতে না পেরোতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পাশে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যে ‘ভালোবাসার মাতৃভাষা উৎসব’ অনুষ্ঠানে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় অনুষ্ঠান বন্ধ করতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে পহেলা বৈশাখের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার হুমকি দেন। ছাত্রলীগের হুমকিতে রাতের বেলা অনুষ্ঠান গুঁটিয়ে নেয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। পরে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের প্রতিশ্রুতিতে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে কোম্পানি।
কনসার্ট আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ‘ভালোবাসার মাতৃভাষা উৎসব ২০২০’ উদযাপন অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা চলছিল। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনের মাঠে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলেন। ব্যাডমিন্টন খেলা শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাজমুল সিদ্দিকী নাজ, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ জালালসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সানোয়ারুল হক সনি ও ইভেন্ট অ্যাক্টিভিস্টরা প্রোগ্রামের জন্য কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে তার কারণ জানতে চান। এবং এ প্রোগ্রামের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা জানে কি না তা জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে ‘না’ বললে ছাত্রলীগ নেতারা আয়োজকদের পহেলা বৈশাখের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলে হুমকি দেন।
ছাত্রলীগের এ হুমকির মুখে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সনি ইভেন্ট ম্যানেজারকে চলে যেতে বললে তারা অনুষ্ঠান গোছানোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং যা যা সাজিয়ে ছিল তা গুঁটিয়ে ফেলে। পরে সকাল বেলা প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের আশ্বাসে তারা অনুষ্ঠান ফের গোছানোর কাজ শুরু করে।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সানোয়ারুল হক সনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা আমাদের সংগঠনসমূহের সিগনেচার প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রাম করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার থেকে অনুমতি নিয়েছি। গতকাল রাতে নাজ, লিমন, শাহ জালালসহ কয়েকজন নেতা আমাদের অনুষ্ঠান করতে কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি তা জানতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা অনুমতি নেয়ার কথা জানিয়েছি। কিন্তু তারপর তারা বলেন, জয়কে জানিয়েছি কি না। আমি বলি, জানাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু জানাতে পারিনি। তারপর তাদের একজন আমাকে বলেন, অনেক টাকার প্রোগ্রাম তো, তাদেরকে খুশি করে দাও। তখন আমি বলি ভাই, এটা স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করছি। আমাদের হাতে কোনো টাকা নেই। এ কথা শোনার পর ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে বলে, পহেলা বৈশাখের কথা মনে নাই? এখন পহেলা বৈশাখের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাবি। এসব কথা বলায় আমি তখন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে চলে যেতে বলি। পরে সকালে প্রক্টর স্যার ও সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আবার কাজ শুরুর কথা বলি।’
চাঁদা দাবি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল সিদ্দিকী নাজ বলেন, ‘বাংলালিংক কার পারমিশন নিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগায়ছে, তার কারণ জানতে চাইছিলাম। তাদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা চাইনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজকদের বিরোধিতা করে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের কনসার্টের অনুমোদন দেয়া হয় না। যারা কনসার্ট করবে তারা নিজ দায়িত্বে করবে। সামনে শিক্ষার্থীদের এ সকল বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
তবে এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।