দম ফেলানোর ফুরসত নেই সাভারের ফুল চাষীদের


রাত পোহালেই ফাল্গুন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এছাড়া কয়েক দিন পরই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির এই তিন দিবস উদযাপনে ফুলের বিকল্প নেই। ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশে ফুলের চাহিদা থাকে বেশি।

দিবসগুলো সামনে রেখে ফুলের চাহিদা মেটাতে রাত-দিন কাজ করছেন ফুল চাষীরা। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ ফুল চাষী এবার তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, যা গতবার তুলনায় কম।

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি, আইঠর ও সাদুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফুল চাষীরা ভীষণ ব্যস্ত। দিবসগুলোর সময় ঘনিয়ে আসায় তাদের ফুল বাগান পরিচর্যা ও ফুল তুলে বিক্রির ব্যস্ততা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দর্শনার্থীদের আনাগোনাও অন্য সব দিনের তুলনায় বেশি।

আইঠর গ্রামের ফুল চাষী আশরাফ মিয়া বলেন, ৭-৮ বছর আগে ভারত থেকে বিদেশি জারবেরা ফুলের চারা এনে বাগান করেছেন তিনি। ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ায় এখন তিনি ফুল চাষে জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। ফুল চাষকে কেন্দ্র করে বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ২৫-৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এই মৌসুমেই কেবল সাভার থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।

দুই বিঘা জমিতে প্রায় ১২ বছর ধরে গোলাপ চাষ করেন আলমগীর। সারা বছর তেমন বিক্রি না হলেও ফেব্রুয়ারিকে ফুল বিক্রির বাণিজ্যিক মাস দাবি করে তিনি বলেন, এ মাসের শুরু থেকেই আমরা গোলাপ গাছের পরিচর্যা করতে থাকি। ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের আগে আমরা ফুলগুলো বিক্রির চেষ্টা করি। সারা বছর ফুল বিক্রি করে যা রোজগার হয় তারচেয়ে তিনগুণ বেশি বিক্রি হয় এই মাসে। ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবস থাকায় বিশেষ করে গোলাপ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে।

প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলপ্রেমী হাজারও দর্শনার্থী এসব ফুলের বাগানে ভিড় করেন। এ সময় তারা ফুলের সুভাষে হারিয়ে গিয়ে ক্যামেরায় ছবি তুলতে এবং ফুল দিয়ে নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অধিক পরিমাণে দর্শনার্থী গোলাপ বাগানে আসায় এখান থেকেই ফুল বিক্রি করে ভালো আয় করেন ফুল চাষীরা।

বর্তমানে শ্যামপুর ও মৈস্তাপাড়া বাজারে ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস গোলাপ ১০ থেকে ১৫ টাকা, প্রতি পিস মাম ফুল ৫ টাকা, জিপসি ফুল বান্ডেল ৫০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রঙভেদে ১০০ ফুল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, কেলেন্ডার এক বান্ডেল ৭০০ টাকা, জারবেরা ফুল ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহম্মেদ বলেন, এবার সাভারের বিরুলিয়া ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে চাষীরা প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। ভালো ফুল উৎপাদন ও তা বাজারজাতকরণে চাষীদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া ফুল ব্যবসায়ী ও চাষীদের দাবি ফুল সংরক্ষণ ও তা বিদেশে রফতানির ব্যাপারে সরকারিভাবে শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।