হঠাৎ করেই গতকাল পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও তার সফর স্থগিত করেছেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে অংশ নিতে ভারত যাওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।
হঠাৎ করে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর এভাবে সফরসূচিতে পরিবর্তন আনার বিষয়টিতে একটি বার্তা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে। তারা ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে : বিদেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর আটকে বার্তা হাসিনার।
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি সংসদে (পাস) হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি যে ঢাকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে গভীর অসন্তোষ তৈরি করেছে তা, এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়ে গেল। মোদি সরকারকে এতটা কড়া বার্তা দিতে সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলছেন, কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল করা এবং সিএবি পাসের বিষয়টিকে পৃথকভাবে দেখা উচিত। সংসদের দুই কক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য উদ্ধৃত করে রবীশ বলছেন, অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত সরকার মনে করে সামরিক শাসন এবং খালেদা জিয়ার সময়েই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন শাহ।
তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং মজবুত। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর সফর বাতিল এবং নাগরিকত্ব বিল পাস হওয়া, দুটি আলাদা ঘটনা। নয়াদিল্লি না আসতে পারার কারণ হিসেবে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেটিকেই মানা উচিত।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, কিছু বিভ্রান্তি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে সাফ ব্যাখ্যা করেছেন যে সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় উৎপীড়ন বর্তমান সরকারের সময় হয়নি। সে দেশে পূর্ববর্তী সরকার এবং সামরিক শাসনের সময় এটা হয়েছে। বরং বর্তমান হাসিনা সরকার সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন।’’
ধর্মীয় বিবেচনায় তৈরি বিজেপি সরকারের উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি গত ১১ ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও পাস হয়েছে ।
রাজ্যসভায় বিলের পক্ষে যুক্তি হিসেবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ বলেন, ‘এসব লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ধর্মীয়ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। এই বিলের মাধ্যমে সেসব শরণার্থীদের অধিকার দেয়া হবে।’
এ বিলের মাধ্যমে উল্লিখিত তিন দেশ থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।