কনে সানজিদা পারভিনের ভাবনা ছিল অন্যরকম। পড়াশোনা করছেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার হবু বড় মেহবুব সাহান ছিলেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দুজনের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক। তবে কনে সানজিদা দেনমোহর হিসেবে বই চেয়ে শিরোনাম হয়েছেন।
মুসলিম বিবাহ রীতিতে বিয়ের সময় বরপক্ষ কনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দেনমোহর ধার্য করেন। ভবিষ্যতে দাম্পত্য জীবনের কোনো কলহে যদি তাদের সম্পর্কের অবসান ঘটে তাহলে কনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সচারচর এর অর্থমূল্য পরিশোধ করে বর বা বরপক্ষ।
বিয়ের এই স্বাভাবিক রীতি থেকে বেরিয়ে এসে সানজিদা পারভিন তার হবু স্বামীর কাছে চেয়ে বসেছে একগাদা বই। পিএইচডি ডিগ্রিধারী বর মেহবুব সাহান তার হবু স্ত্রীর এমন মনোবাসনা বুঝতে পেরেছেন সহজেই। তাই তিনি দেনমোহর হিসেবে বই দিয়ে সানজিদার আকাঙ্খা পূরণ করেছেন।
গত ১২ অক্টোবর ছিল তাদের বিয়ে। বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে কেনা হয় ৫০ হাজার টাকার বই। সানজিদা এখন ইংরেজিতে পিএইচডি করছেন। তাই তার চাহিদামতো নানা ধরনের বই কিনে দিয়েছেন মেহবুব। গীতা বাইবেল থেকে শুরু করে সবই আছে এই বইয়ের ভান্ডারে।
নবদম্পতি বলছেন, ‘ব্যক্তিজীবনে আমরা মুসলিম হলেও আমরা কিন্তু একইসঙ্গে ভারতীয়, বাঙালি এবং একবিংশ শতাব্দীর মানুষ। আমাদের এই পরিচয়টাও তো সত্য।’ সানজিদা বলেন, ‘আমি যে যুগে বাস করছি তার চাহিদা বুঝেছি বলেই দেনমোহর হিসেবে বই নিয়েছি।’
তবে এমন উদাহরণ তৈরিতে তাদের কিন্তু বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে। কেননা উভয় পরিবারে অনেকে তাদের এমন ‘অভিনব দেনমোহরের’ বিষয়ে সম্মতি দেননি। অনেকে বলেন, এসব বই নয়, দেনমোহর হিসেবে নগদ টাকা পরিশোধ করতে হবে। সব সামলেই বিয়ের কাজটা শেষ করতে হয়েছে তাদের।
মোহর হিসেবে টাকার বদলে বই নেয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে বাবার আদর্শ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান সানজিদা। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ধর্মের নিয়ম মেনে জাকাত হিসেবে নগদ টাকার বদলে মানুষকে বই ও শিক্ষাসামগ্রী কিনে দিনে। তিনি বলতেন, ‘টাকা নয় বই-ই মানুষকে আলোর পথ দেখাতে পারে।’