ধান-রসুনের নতুন সাথী তরমুজ


ডেস্ক রিপোর্ট ::  সাথী ফল হিসেবে নাটোরে রসুন ক্ষেতে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চলনবিলের জমিতে সাথী ফসল থাকায় তিনটি ফসল কৃষকদের ঘরে উঠছে। কৃষকরা পাচ্ছেন বাড়তি মুনাফা। গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলী গ্রামের কৃষক আমরি আলী ও নান্নু মিয়া ২০০৯ সালে দুই বিঘা জমিতে প্রথম রসুনের সঙ্গে তরমুজ চাষ করেন।

আমির আলী ও নান্নু মিয়া প্রতি বিঘায় রসুন থেকে মুনাফা পেয়েছিলেন ২৪ হাজার টাকা। তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও তত্বাবধান পেয়েছেন। অন্যদিকে তরমুজ থেকে মুনাফা আসে ১৪ হাজার টাকা। তাদের সফলতা দেখে সাথী ফসল আবাসে ঝুঁকছেন অন্যরাও।

গত বছর উদবাড়িয়া এলাকার কৃষক রবিউল করিম রসুনের চারবিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে দুই লাখ টাকা মুনাফা করেছেন। একই এলাকার শহিদুল ১০ বিঘা জমিতে দুই বছর ধরে সাথী ফসল চাষ করে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা করে মুনাফা পেয়েছেন।

এরপর থেকে এই এলাকায় সাথী ফসলের আবাদ বাড়ছে। ২০০৯ সালে সাথী ফসলের জমি দুই বিঘা থেকে ৯২০ হেক্টরে পরিণত হয়েছে। চলনবিলে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর নরম মাটিতে রসুনের কোয়া বোনা হয়। প্রায় দুই মাস পরে ওই একই জমিতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। বর্তমানে জমি থেকে রসুন ওঠা প্রায় শেষ হয়েছে। এরপর চৈত্রের শেষার্ধ থেকে তরমুজ উঠতে শুরু করবে।

গুরুদাসপুরের সিধুলী, বিন্নাবাড়ী, ধারাবারিষা গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। একই এলাকার কৃষক রমিজ সরকার চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে রসুনের সঙ্গে তরমুজ আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি গড়ে ২৫ মণ করে রসুনের উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে রমিজ সরকার বলেন, প্রতি বিঘায় ৪৫০টি গর্তের প্রতিটিতে দুইটি করে তরমুজের চারা লাগানো আছে। রসুন উঠার পর এখন একটি সেচ ও পরিচর্যার পর তরমুজ উঠা শুরু হবে।

রমিজ বলেন, তরমুজ চাষে বিঘা প্রতি মোট খরচ প্রায় ছয় হাজার টাকা। আর তরমুজ বিক্রি করে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় আসে। অর্থাৎ মুনাফার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। এই হিসেবে এলাকার কৃষকদের ঘরে যাবে বাড়তি ছয় কোটি টাকার ওপরে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, সাথী চাষাবাদে ফলনের কোনো কমতি হয় না, বরং জমিতে শস্য বিন্যাস অর্থাৎ প্রতি বছর একই শস্য চাষাবাদ না করে শস্য পরিবর্তন করা হলে বরং বাড়তি ফলন পাওয়া যায়।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, তরমুজের মুনাফা দিয়ে কৃষকরা রসুনের খরচ মেটাতে পারে অনায়াসে। ফলে উৎপাদিত রসুনের পুরোটাই মুনাফা হিসেবে থাকে কৃষকের ঘরে। দ্বিফসলী এসব জমিতে সাথী ফসল চাষ করে কৃষকরা তিন ফসলের সুফল পাচ্ছেন।