নতুন ছয় ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান মিলেছে মিয়ানমারে!


সম্পূর্ণ নতুন ছয় ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মিয়ানমারে জরিপ চালানোর সময় বাদুড়ের দেহে এসব ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব ভাইরাস বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ ভাইরাসের একই গোত্রভুক্ত। তবে গবেষকরা বলছেন, নতুন এসব ভাইরাস জিনগতভাবে সার্স বা কভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

গত ৯ এপ্রিল প্লাস ওয়ান জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সাইন্স। মিয়ানমারে জরিপের সময় এসব ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাসের গোত্রভুক্ত সার্স ২০০২-০৩ সালে বিশ্ব জুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই গোত্রের আরেক ভাইরাস বর্তমানে মহামারির রূপ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সংক্রমিত করেছে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ মানুষকে।

মিয়ানমারে বাদুড়ের ওপর জরিপ চালানোর সময় নতুন ধরনের এসব করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। সরকারি অর্থায়নে প্রেডিক্ট নামে এক কর্মসূচির আওতায় ওই জরিপ চালানো হয়। প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে এমন সংক্রামক রোগ শনাক্ত করতে এই জরিপ চালানো হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়ের মধ্যে কয়েক হাজার করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসও বাদুড় থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। তবে বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার আগে তৃতীয় কোনও প্রাণীর শরীরে এটি অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থান নিয়েছিল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

জরিপের অংশ হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাদুড়ের ১১টি প্রজাতি থেকে শত শত লালা ও মলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মিয়ানমারের অন্তত তিনটি স্থান থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব স্থানে বাদুড়ের আবাসস্থলের কাছে নানা কারণে মানুষের যাতায়াত রয়েছে।

নতুন পাওয়া এসব করোনাভাইরাস অন্য প্রজাতিতে যেতে পারে কিনা কিংবা মানুষের ওপর তা কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণাকর্মটির সহ লেখক সুজান মুরে বলেন, ‘অনেক করোনাভাইরাসই মানুষের জন্য হুমকি নয়, কিন্তু আমরা যখন প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাণীতে খুজেঁ পাই, তখন সম্ভাব্য হুমকি খতিয়ে দেখার জন্য মূল্যবান সময় পাই। কোনও মহামারি ঘটার আগেই তা ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো অব্যাহত নজরদারি, গবেষণা ও শিক্ষা।’

এর আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বর্তমানে মানবজাতির ওপর তাণ্ডব চালানো নভেল করোনাভাইরাসের তিনটি পৃথক প্রকার খুঁজে পেয়েছিলেন। এখন চীনের উহান এবং পূর্ব এশিয়ায় যে ভাইরাসগুলি দেখা যাচ্ছে সেটা এই ভাইরাসের মূল প্রকার নয়। এটি মূলত নতুন একটি প্রজাতি। পরিবর্তিত এই স্ট্রেন (টাইপ-বি নামে পরিচিত) এবং মূল সার্স-কোভি -২ ভাইরাস থেকে উদ্ভূত যা বাঁদুড় কিংবা প্যাঙ্গোলিনের (টাইপ-এ) মাধ্যমে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। টাইপ-এ ভাইরাস এখন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যাচ্ছে। এছাড়া টাইপ-সি নামের আরেকটি প্রকার উহানের টাইপ-বি থেকে পরিবর্তিত হয়ে সিঙ্গাপুর হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ভাইরাসটি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করে চলেছে। টিকে থাকার জন্য এই ভাইরাসের নিজেকে পরিবর্তনের অসম্ভব রকম ক্ষমতা রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *